পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চিহ্ন S অজয় এগিয়ে যায় । ‘হই!’ বলে। লালচে গোপওলা অফিসার, কাছে এসে সোজা সহজ হুকুম জারি করে, “সাফ করে।” ص۔ অজয় প্রশ্ন করে, “এ রাস্তায় কি ট্রাফিক বন্ধ ? প্রশ্ন শুনেই বোধ হয় রেগে যায় লালচে গোপ, আর রেগে যায় বলে ধৈৰ্য ধরে বলে, “সাফ করে। সাফ করো। তুম ইটা ফিক, তুম সাফ করোগে।” ‘ইউ আর ম্যান্ড!” অজয় বলে। তখন দু'হাতে ধাক্কা দিয়ে অজয়কে সে ফেলে দেয় রাস্তায় । মাথায় সামান্য একটু চোট লাগে অজয়ের। ডান হাতের কাছে একটি ইট। মাটি পোডানো ইট নয়, শক্ত পাথুরে ইট, যা দিয়ে রাস্তা বাধায়। চোখে অন্ধকার দেখছে অজয়। কয়েক মুহুর্তের জন্য সে এখন উন্মাদ। হাতে তার জোর আছে। এই ইটটা ছুড়ে মেরে সে মাথার ঘিলু বার করে দিতে পারে লালচে গোপের। তারপর যা হয় হবে । না । দাতে দাত লাগিয়ে অজয় বলে, না । সে ভদ্রলোকের ছেলে, কে একজন তাকে অপমান করেছে, এই ব্যক্তিগত আক্ৰোশে অন্ধ হয়ে কিছু তার করা চলবে না। হাসপাতালের আহত ছেলেদের মুখ তার মনে পড়ে। চোখের সামনে ভেসে ওঠে রাস্তায় বসা একদল তরুণের মুখ। না, নরক থেকে শয়তান এসে তাকে বিগড়েবার চেষ্টা করলেও সে খাটি থাকবে । সে সংযত থাকবে । সে শান্ত থাকবে । ধীরে ধীরে অজয় উঠে দাড়ায়। বঁ৷ হাতটা কি ভেঙে গেছে ? গেছে। যদি যাক, এখন তা ভাববার সময় নয়, ভাঙা হাত জোড়া লাগবে । লাল গোপ তাকিয়ে থাকে। সিমেন্টের শক্ত ইটটা সে দেখেছে, অজয় যখন ইইটা নামিয়ে রাখছে। তার মাথায় ছুড়ে মারবার জন্য ইটটা তুলেছিল। মারল না কেন ? ও-ইট মাথায় লাগলে সে বঁাচত না। কিন্তু মারল না কেন ? লালগোপ বোধ হয় বুঝে উঠতে পারে না, তাই তাকিয়ে থাকে। উঠে দাড়াবার পর অজয় টের পায় একটি গেয়ে পরিবারের মেয়ে পুরুষ তাকে প্ৰায় ঘিরে ফেলেছে। ক্ৰমাগত প্রশ্ন হচ্ছে, ‘লাগেনি তো? বেশী লাগেনি তো বাৰু ? ‘না ৷ লাগেনি ।” তখন যাদব আবার পোস্টকার্ডটি বার করে সামনে ধরে বলে, বাবু এ ঠিকানায় কোন দিকে যাব ?