পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sy. মানিক গ্ৰন্থাবলী ভুল করিতেছে, এভাবে তার শোক শান্ত করা যাইবে না ; সকলে তার সঙ্গে একটু কঁাদিলেই বরং তার ব্যথা জুড়াইয়া যাইবে, ভাবিয়া স্বপ্নে বুকটা যেন ফাটিয়া যাইতেছিল। ঘুম ভাঙ্গিবার পর সকলের উপর সে একটা তীব্র বিদ্বেষ অনুভৰ করিতেছে। স্বপ্ন মিলাইয়া গিয়াছে স্বপ্নে, এখন শুধু আছে একটা বেদনামাখা বিস্ময়কর ভার-বোধ এবং সকলের নির্মমতার বিরুদ্ধে অভিমান-ভরা নালিশ । ছেলে তার নাই। এ পর্যন্ত বিবাহ সে করে নাই। স্বপ্নের কথা ভাবিয়া তার হাসি পাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু স্বপ্নের কথা সে ভাবিতেছে না, স্বপ্নের প্রভাবটা শুধু তার ভাবনাকে নিয়ন্ত্রিত করিতেছে। তার কেউ নাই। সকলে তার পর। তার কিছু নাই। কেউ তাকে কিছু 6श नाई । সংসার কলরব কানে আসিতেছিল । তাকে বাদ দিয়াই সকলে কলেৱৰ করিতেছে। স্বপ্নের মত সে যদি এখন শূন্যে মিলাইয়া যায়, কারও কিছু আসিয়া যাইবে না, এমনি ভাবে কলরব করিয়া চলিবে দিনের পর দিন । এ ষে ছেলেমানুষী চিন্তা, ত্ৰিষ্টুপ তা বুঝিতে পারিতেছিল, কিন্তু উপায় কি ! চিন্তাগুলি আজ যেন স্বাধীন হইয়া গিয়াছে, এতদিনের ধরা-বাধা পথে শিক্ষিত সৈন্যের মত সংস্কারগত নির্দেশের তালে তালে পা ফেলিয়া চলিতে রাজী নয়। এ ধরনের আরও কত চিন্তা কোথা হইতে আসিয়া তার মনে খেলা করিয়া বেড়াইতে লাগিল, সংযত করিবার কোন চেষ্টাই কাজে আসিল না । সাত বছরের একটি মেয়ে দরজার ফাকে ডাক দিয়া চীৎকার করিয়া বলিল, ‘বারোটা পৰ্যন্ত ঘুমাবে নাকি মামা, বিছানা ছেড়ে উঠবে না ? ‘এদিকে শোন, রাণু।” রাণু নিৰ্ভয়ে কাছে আসিল । মামা তাকে বড় ভালবাসে । হয় তো কাল রাত্রে বাড়ী ফেরার সময়ে তার জন্যে কিছু কিনিয়া আনিয়াছে, নয় তো তাকে একটু আদর করিবার শখ জাগিয়াছে মামার। মুখে প্ৰত্যাশাৱ হাসি ফুটাইয়া রাণু কাছে আসিয়া দাড়ানো মাত্র ক্রিস্টুপ সজোরে তার গালে একটা চড় বসাইয়া দিল ! 'ইয়ার্কি হচ্ছে আমার সঙ্গে, না ? এ তো আদর নয়, রাগের ভানে খেলার ছলে শাসন করা নয়। চমক ভাঙ্গিয়া আঘাতের বেদনায় চীৎকার করিয়া কঁাদিতে রাণুর একটু সময় লাগিল। ততক্ষণে বিছানা হইতে নামিয়া ত্ৰিষ্টপ গাই গঢ় করিয়া ঘরের বাহিরে চলিয়া গিয়াছে। একটি ছোট দোতলা বাড়ীর একতলায় তাহাদেৱ অধিকার। ক্রিস্টুপি ঘুমায়