পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আদায়ের ইতিহাস Str( বৈঠকখানায়। দিনের বেলা তার বিছানা ভিতৱে টানিয়া আনা হয়, রাত্রে আবার বৈঠকখানায় চৌকিতে বিছানাট পাতিয়া দেওয়া হয়। ঘরটিতে দোতলার ভাড়াটেদের ভাগ আছে; দিনের বেল ক্রিষ্টপ এক ঘরটি দখল করিয়া থাকিলে তারা আপত্তি করে। সারাদিন একটি লোকও তাদের সঙ্গে দেখা করিতে আসে কিনা সন্দেহ, তবু তারা সব সময়ে কোন এক অজানা আগন্তুকের প্রতীক্ষা করে এবং কেউ আসিয়া পাছে কিছু মনে করে, এই ভয়ে দিনের বেল ক্রিস্টুপের বিছানাটি চৌকীর উপর গুটাইয়া রাখিতেও দেয় না। উঠানের এক কোণে তার দিদি প্ৰভা টিউবওয়েলে জল তুলিয়া বড় একটা বালতি ভরিতেছিল, ক্রিষ্টপকে দেখিয়াই জিজ্ঞাসা করিল, “রাণু, কঁদছে কেন রে ? ক্রিষ্টপ গভীর মুখে বলিল, ‘মেরেছি।” ‘কেন, কি করেছিল মেয়েটা ? কৌতুহলের বশেই প্রভার কথাটা জিজ্ঞাসা করিল, অনুযোগের জন্য নয়। কিন্তু প্রশ্ন শুনিয়া ব্রিষ্টপ যেন ক্ষেপিয়া গেল। “অত কৈফিয়তে তোমার দরকার ? খুলী হয়েছে-মেরেছি।” প্ৰভা খানিকক্ষণ অবাক হইয়া ভায়ের মুখের দিকে চাহিয়া থাকিয়া বাহিরের ঘরের দিকে চলিয়া গেল। ক্রিষ্টপ তাড়াতাড়ি মুখ ধুইয়া রান্না ঘরে গিয়াই দাবী জানাইল, “আমার চা কই ? মা খুন্তি দিয়া তরকারী নাড়িতেছিলেন, বলিলেন, “এই ষে করে দি । এত বেলা করে উঠলি, চা-ই বা খাবি কখন, চান করে খেতেই বা বসবি কখন । ওঁর সঙ্গে তো যেতে হবে তোকে ?” | || “তোর বুঝি দেরীতে অফিস ? তা হোক, ওঁর সঙ্গেই তুই যা বাৰা, প্ৰথম দিনটা । তিনি সব দেখিয়ে শুনিয়ে দিতে পারেন ।” “আমি চাকরী করব না ।” কথা শুনিয়া মা হাতের খুন্তি উচু করিয়া ছেলের মুখের দিকে চাহিয়া ৰহিলেন। অনেক দিনের অনেক চেষ্টার পর পাঁচাত্তর টাকা বেতনের এই চাকরীটি জুটিয়েছে, আজ তার ছেলে প্ৰথম চাকরীতে যোগ দিবার কথা, এখন সে বলিতেছে। চাকরী করিবে না। প্রথমটা মা একেবারে থাতমত খাইয়া গেলেন । তারপর মনে করিলেন তাই কি কখনও হয় ? ছেলে তার সঙ্গে দুষ্টামি করিতেছে। ‘নে, খুব হয়েছে, আর ফাজলামি করে না ! প্ৰভাকে ডাকতো, তোকে খেতে দিয়ে চাট করুক।”