পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আদায়ের ইতিহাস >br? কিন্তু একজনের জগৎ কি এতটুকু কাছে আসিতেছে আর একজনের জগতের ? এমন একটি মানুষও যদি থাকিত - যে তার আপনি, যার সঙ্গে তার প্রকৃত যোগাযোগ আছে, হাসি-কান্না ছাড়াই যে বুঝিতে পারে সে সুখী কি দুখী, এখন তাকে সে জিজ্ঞাসা করিতে পারিত তার কি করা উচিত । এই সব ভাবিতে ভাবিতে ত্ৰিষ্টপের মনে পড়িয়া গেল, সকালে সে চা খায় নাই, রীতিমত অস্বস্তিবােধ হইতেছে ; ডাইনে বিধুর চায়ের দোকান,-“স্বাধীন ভারত রেস্ট-রেন্ট’। এক কাপ চা খাইতে থাইতে আর একবার চাকরীর কথাটা ভাবিয়া দেখা যাক। তক্তার মত চ্যাপ্টা বিধুর করাতের মত দাতাল অমায়িক হাসির জবাবে একটু হাসিয়া, দেওয়ালে জরিপাড় শাড়ী পরা জগদ্ধাত্রীর ছবির পাশে পাকা ফলের মত টসটসে ও গোলাকার উলঙ্গ জাপানী মেয়ের ছবির দিকে আনমনে চাহিয়া চুমুক দিতে দিতে চায়ের কাপ খালি হইয়া গেল, এলোমেলো ভাবনাগুলিকে কোনমতেই আয়ত্ত করা গেল না । ‘কলেজ স্কোয়ারে সস্তায় পাওয়া যায়, তিষ্ট।” মণীশ কাছে আসিয়া বসিয়াছে, আলগোছে গরম চায়ের কাপে চুমুক দিতে গিয়া আড়চোখে চাহিয়া আছে। জুতা আর চুলে চকচকে পালিশ, পাঞ্জাবির হাত গিলাকিরা, তলায় গেঞ্জি দেখা যায়, সোনার বোতামগুলি সাদা শূন্যতার মধ্যে টুকরো টুকরো সোনালী অলঙ্কারের মত। “কি পাওয়া যায় ? ‘চীন জাপানের মেয়ে - এদেশীও পাওয়া যায়। কষ্ট করে এখানে না এসে কয়েকটা কিনে এনে ঘরে টাঙ্গিয়ে রাখিস, সারাদিন যত খুন্সী দেখতে পারবি।” মনে মনে বিরক্ত হইলেও, ক্রিষ্টপ একটু হাসিল। তবে একটা বিয়ে করলে, অবশ্য সব হাঙ্গামা চুকে যায়। তাই কর না ?” এই ধরনের পরিহাস করিতে মণীশ খুব পটু। বোধ হয় সেই জন্যই মণীশকে সে পছন্দ করে না । মানুষটা মণীশ খারাপ নয় ; সাজসজ্জার দিকে তার অতিরিক্ত বোকটা ভাল না লাগিলেও, সেটা ক্রিষ্টপ অপরাধ মনে করে না। মণীশের বুদ্ধি খুব তীক্ষা, পড়ায়েনাও সে অনেক করিয়াছে, ক্রিষ্টপ বুঝিয়া উঠিতে পারে না। সব সময়ে সে কেন এমন বাবু সাজিয়া থাকিতে ভালবাসে। ত্ৰিষ্টপের সবচেয়ে খারাপ লাগে মণীশের অদ্ভুত আত্মপ্ৰত্যয় আর সবজান্তার ভাব। কিছুই সে যেন গ্রাহ করে না, সমস্তই তার কাছে যেন তুচ্ছ। রাজপুত্রের বেশে এই নোংরা চায়ের দোকানে চা খাইতে আসিয়া এখানকার সাধারণ মানুষগুলির সঙ্গে সমানভাৰে হাসিগল্প করা: