পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আদায়ের ইতিহাস AOS) “কিছুদিন চাকরী করলে যদি-” “ও ভাবে যদির কথা ভাবলে কিছু হয় না। তিষ্ট। প্ল্যান করবার সময়ে সমস্ত যদির হিসাব করতে হয়- যদি এরকম হয়, তবে এই ব্যবস্থা করতে হবে, যদি ওরকম হয়, তবে ওরকম ব্যবস্থা করতে হবে ; ব্যাস, সেইখানে যদির শেষ । যদি এ রকম না হয়ে ও রকম হয়, ভেবে প্ৰথমেই ভড়কালে তো চলে না ! তা’ছাড়া, কিছুদিন চাকরী করে, সময়মত চাকরীটিা ছাড়বার ক্ষমতা যদি তোমার না থাকে, তাতেই তো প্ৰমাণ হয়ে যাবে- বড় কিছু করবার ক্ষমতা তোমার নেই। চাকরী করে যাওয়াটাই তখন সব চেয়ে ভাল হবে তোমার পক্ষে । “কিন্তু চাকরী করলেই জড়িয়ে পড়বা যে। বাড়ীর লোকের মুখ চেয়ে চাকরী নেওয়ার মানেই দাড়াবে,--” “বাড়ীর লোকের মুখ চেয়ে চাকরী নেবে কেন ? নিজের জন্য চাকরী নেবে, বড় কিছু করবার অঙ্গ হিসাবে চাকরী নেবে। কি করব, এখনও ঠিক করতে পারিনি, চাকরী করে যা পারি উপার্জন করা যাক - এই ভেবে চাকরী নেবে। বাড়ীর লোকের মুখ চেয়ে বড় কিছু করা যায় না, তিষ্ট। সাৰূসেসের জন্য স্বার্থপর না হলে চলে না। অবশ্য বাড়ীর লোকের মুখ কেন, পৃথিবীর লোকের মুখ চাইতে কোন বারণ নেই, সকলকে বঞ্চিত করে নিজের সুখ খোজার স্বার্থপরতার কথা বলছি না - সাকসেসের পথে বিস্ত্র হিসাবে যা কিছু দাড়াবে, সে সমস্ত বিসর্জন দেওয়ার কথা বলছি। যেমন ধর—তুমি যেদিন চাকরীটা ছেড়ে দেবে, বাড়ীর লোক সেদিন কেঁদো-কেটে চোখ ফুলিয়ে ফেলবে, তুমিও তাদের সঙ্গে। কঁদবে, অন্ততঃ মনে মনে কঁদবে। কিন্তু ভাববে, কঁাদুক, উপায় কি !” সাড়ে দশটার সময়ে ক্রিষ্টপ বাড়ী ফিরিল। অবিনাশ রান্নাঘরের দরজার কাছে মোড়ায় বসিয়া তামাক টানিতেছিলেন ; তখন পৰ্যন্ত তিনি স্নান করেন নাই । ‘আপিস যাওনি যে ? “লজ্জা করে না তোর ? যোয়ানমদ তুই ঘরে বসে থাকবি, বুড়ে বয়সে আমি খেটে মরব ? তুই যদি না যাস, আমিও আর যাব না।” “চল, চল আমি যাচ্ছি।’ - এক খাব লা তেল নিয়ে মাথায় ঘষিতে ঘষিতে ক্রিষ্টপ তাড়াতাড়ি স্নান করিতে গেল। বড়বাবু পদ্মলোচন অভিমান করিয়া বলিলেন, “প্ৰথম দিনটাতেই দেৱী হ’ল ?” অবিনাশ কাচুমাচু করিয়া বলিলেন, ‘মন্দিরে একবার পূজো দিতে গিয়ে-’ পদ্মলোচন তাড়াতাড়ি কপালে হাত ঠেকাইয়া বলিলেন, “তা বেশ, তা বেশ ।”