পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/২০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আদায়ের ইতিহাস O পুৱানো, সহরের পরিসর বাড়ানাের প্রয়োজনের নূতন স্বষ্টি হয় নাই। পুরানো বাড়ীগুলি এলোমেলো ভাবে বসানো, রাস্ত আঁকাবাকা । আগাছাভিরা বাগানের কয়েকটি টুকরা এখানে ওখানে বসানো আছে। ধীরেনের বাড়ীর অদূরে পানার আস্তরণ বিছানো একটি পুকুর। কাছে ও দূরে অনেক নারিকেল গাছ মাথা উচু করিয়া দাড়াইয়া আছে। রাস্তায় ছােট ছেলেদের মার্বেল খেলায়, বাড়ীর সামনে রোয়াকে বসিয়া বড় ছেলেদের জটিল করায়, উবু হইয়া বসিয়া এক প্রৌঢ়ের হুক হাতে তামাক খাওয়ায়, ছেলে কোলে এক বাড়ীর দুয়ার হইতে বাহির হইয়া একটি আধ ময়লা শাড়ী পরা তরুণীর আরেক বাড়ীর দুয়ারে ঢুকিয়া সঁড়ায়, তার এখনকার শান্ত মানসিক অবস্থার সঙ্গে কেমন একটা আশ্চর্য সামঞ্জস্য সৃষ্টি হইতেছে। বাড়ীর ভিতরে গৃহসজ্জার মধ্যেও একটি সর্বাঙ্গীন সঙ্গতি তার বড়ই তৃপ্তিকর মনে হইল। এ সব সংসারে বিশৃঙ্খলার চেয়ে বেশী চোখে পড়ে অসঙ্গতি । ভাঙ্গা চৌকীর পাশে মস্ত দামী ড্রেসিং টেবিল, পেরেক মারা কাঠের চেয়ারের পিঠে রঙীন সুতার কাজ করা খোল, দামী ফ্রেমে বঁধানে তৈলচিত্রের পাশে আঠ দিয়া দেয়ালে আঁটা মাসিকের ছবি, ময়লা বিছানার চাদরে ধবধবে পরিষ্কার ওয়ারপরানো তেল-চটচটে বালিশ, পিাড়ির সঙ্গে কাপেটের আসন, সযত্নে সাজানো জিনিষের একটি তাকের নিচেই অযত্নে ছড়ানো জিনিষের আরেকটি তাক। এ বাড়ীর গৃহােপকরণে সেই বিসদৃশ বিরোধ নাই, চারিদিকে ছড়ানো একটি বিস্ময়কর সাম্যের ভাব দৃষ্টিকে আনন্দ দেয়। ক্রিস্টুপের মনে হয়, এ ঘর যারা সাজাইয়াছে তাদের সত্যই বুদ্ধি আছে। অতিরিক্ত ঝকঝকে কিছু তার চায় নাই বলিয়া একেবারে রঙচটা কিছু তাদের রাখিতে হয় নাই। তিনটি ভাঙ্গা চেয়ারের মধ্যে একটি খুব দামী চেয়ারে তাকে বসানোর গৌরব বাতিল করিয়া দিয়াছে বলিয়া চারটি সাধারণ শক্ত চেয়ারের যে কোন একটিতে তাকে নিশ্চিন্ত মনে বসিতে বলিতে পারিয়াছে । ধীরেন ও রমলা যে আগ্রহের সঙ্গে তাকে অভ্যর্থনা জানাইল, ত্ৰিষ্টপের বিশ্বাস করাই কঠিন হইয়া পড়িল যে, তার সবটাই আন্তরিক। তার সঙ্গে এদের পরিচয় শুধু একদিনের রমলা একবার শুধু তাকে বলিয়াছিল, সে এ বাড়ীতে আসিলে তারা খুলী হইবে। ভদ্রতা করিয়া ও কথা কে না বলে ? ওই আহবানেই কেউ বাড়ীতে আসিলে, ভদ্রতা করিয়া কে না খুলী হয় ? কিন্তু সে আসায় সত্য এদের যেন আনন্দের সীমা নাই। তার এই অনুগ্ৰহে তারা যেন কৃতাৰ্থ হইয়াছে।