পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

गांबिक ग्रंहांबर्वी দাম দিতে কান্না আসবে, তাও বলে যাচ্ছি। আগে থেকে । কিন্তু ওটা চাই। গায়ে জোর নেই কে একদম, পেটে কিছু সইবে না, ওটা এনে খাওয়াতে হবে। দুধ টুধ ভাতটাত আর দিওনা কিন্তু, খবৰ্দার! রঘু নিজের মনে খানিক চিন্তা করে বলে, ‘হ্যা শালার ডাক্তারা” ভালো। ঠিক ধরেছে। ছোট-বেী, শুনিছ? যা তা খেয়োনি।” চি চি গলায় দুৰ্গা বলে, “খেতে দেয় নাকি মোকে ? খিদেয় মরে যাইনা ?” রঘু বিরজার মুখের দিকে তাকায়। বিরাজা মাথা নেডে বলে, “চোখের খিদে ৷ কাঞ্চার হয়েছিল মনে নেই ? যেমন খায় ঠিক তেমনি সব বেরোয় আর সারাখন খাই খাই করে মরে ? কতো খাওয়ানু তৰু পাকাটি হয়ে গেল না। অমন ছেলা মোর, মরে গেল না ! চােখের খিদে মরণ খিদে। বালি তোলা রইতে পারে একটুকু, ফুটিয়ে দিচ্ছি, খাওয়াও না কেন।” বিরজা যেন রাগ করেই বালি ফুটিয়ে আনতে যায়। কিন্তু রঘু জানে এটা তার রাগ নয়। মৃত সন্তানের কথা মনে পড়লেই বিরজার সব কথায় কলহের সুর আসে, দুপদাপ পা ফেলে সে হাটে । দুর্গার কাছে গিয়ে রঘু তার কপালে হাত দিয়ে জ্বর অনুভব করে, হাতের তালু এবং উল্টো পিঠ দুদিক দিয়েই জ্বরটা হৃদয়ঙ্গম করার চেষ্টা করে । মথুর ডাক্তার থার্মোমিটার দিয়ে বলে গেছে জ্বর কত, কিন্তু রঘুর কাছে স্পর্শ না করে তাপ টের পাওয়ার কোন অর্থ নেই। একশো তিন বেশী জর তা সে জানে, কেমন ধারা বেশী সেটা তো জানতে হবে গায়ে হাত দিয়ে । হঁ্যা, কপালটা পুড়ে যাচ্ছে দুর্গার। গলার নীচে বুকের তাপটাও রঘু পরীক্ষা করে। ডানহাতটি বার করে দুৰ্গা গায়ের কঁথার ওপরে ফেলে রেখেছিল, মরা সাপের মত হাত । মায়া দেখাতে নয়, তাপ দেখবার জন্যেই সে হাতটি নিজের হাতে তুলে নিয়ে রঘুর যেন ধাঁধা লেগে যায়। নিজের পরিপুষ্ট সবল হাতের মস্ত থাবায় এইটুকু হাত নেতিয়ে আছে দেখে দুৰ্গাকে তার খানিক আগের চেয়েও অনেক ছোট্ট, অনেক ক্ষীণ মনে হয়। একটু হতভম্ব হয়ে থাকে রঘু, তার গা ঘিন ঘিন করে । কিছু দিন আগে চাদ মাইতির আট বছরের মেয়েটাকে নিয়ে গায়ের ভূতনাথ সা’র কীৰ্ত্তির কথাটা মনে পড়তে থাকে। ভূতনাথের জেল হয়েছে সাত বছর। যত সে নিজেকে বোঝায় যে এ তার বিয়ে করা বেী, বয়স এর কম হয়নি, অনেককাল এ তার ঘর করেছে, একবার মা হয়েছে তার ছেলেরা, ততই যেন শায়িতা দুৰ্গা ম্যালেরিয়ায় পেট মোটা কঙ্কালসার কচি একটা মেয়ে হয়ে তার আরও বেশী ঘেন্না ধরিয়ে দেয়।