পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/২৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

R 8r মানিক গ্ৰন্থাবলী আজ প্ৰমাণ না করে যে ভদ্র মানুষ সব সময় সব কাজের কদৰ্য মানে করিবার জন্যই উদগ্রীব হইয়া থাকে না, তবে তার মাথাটা ধীরে ধীরে বোমায় পরিণত হইয়া ফাটিয়া যাইবে । তাড়াতাড়ি সে বিছানা ছাড়িয়া উঠিয়া পড়িল । রিণি চমৎকার গান গাহিতে পারে। অন্ততঃ লোকে তাই বলে। গলাটি তার মৃদু ও মিহি, সুরগুলি তার কোমল ও করুণ, গান সে শিখিয়াছে নামকরা এক ওস্তাদের কাছে। ওস্তাদের বুদ্ধি ছিল তাই তিনি শিন্যাকে কিছুমাত্র ওস্তাদি শিখাইবার চেষ্টা করেন নাই, শুধু শিখাইয়াছেন মোলায়েম সুর। কেউ কেউ অবশ্য বলে যে রিণি গান করে না, বিড়াল ছানার ছাড়া ছাড়া করুণ আওয়াজটাকেই একটানা উচ্চারণ করিয়া যায়, তবু অনেকের কাছেই রিণির গান ভাল লাগে। মনটা উদাসী হইয়া যায় অনেকের, ঘুমের বাহন ছাড়াই স্বাগত স্বপ্ন নামিয়া আসে। অনেকের চোখে, লজ্জা ও বেদনার সঙ্গে অনেকের মনে হয় যে এত ঘষামাজার পরেও তো তারা মাজিত জীবনযাত্রার পথে বিনা চেষ্টায় পিছলাইয়া চলিবার মত মোলায়েম হইতে পারে নাই । স্তর কে, এল-এর বাড়ীর সদরের সুশ্ৰী দরজাটি পার হইয়া ভিতরে পা দেওয়া মাত্র টের পাওয়া যায়, বাহিরের রাস্তাটা কি নোংরা । কতবার রাজকুমার এ দরজা পার হইয়াছে কিন্তু একবারও দরজাটি পার হওয়ার একমুহূর্ত আগে এই অভিজ্ঞতা তার মনে পড়ে না। স্যর কে, এল-এর বাড়ীর ভিতরটা শুধু দামী ও সুশ্ৰী আসবাবে সুন্দরভাবে সাজানো নয়, সদর দরজার এপাশে এবাড়ীর বিস্ময়কর রূপ ও শ্ৰীৱ মহিমাটাই শুধু স্পষ্ট হইয়া নাই, কি যেন একটি। ম্যাজিক ছড়ানো আছে চারিদিকে,- পার্থক্য ও দূরত্বের ইঙ্গিতভরা এক অহঙ্কারী আবেষ্টনীর দুর্বোধ্য প্ৰভাবের ম্যাজিক । বাড়ীতে ঢুকিলেই রাজকুমার একটু ঝিমাইয়া যায়। একটা অদ্ভুত কথা তার মনে হয়। মনে হয়, অনেকদিন আগে একবার এক পাহাড়ে একজন সংসারত্যাগী কৌপীনধারী সন্ন্যাসীর গুহায় ঢুকিয়া তার যেমন গা ছমছম করিয়াছিল, এখানেও ঠিক তেমনি লাগিতেছে। আরাম উপভোগের আধুনিকতম কত আয়োজন। এখানে, তবু তার মনে হয় এ বাড়ীতে যারা বাস করে তারা যেন ধূলামাটির বাস্তব জগতকে ত্যাগ করিয়াছে, রক্তমাংসের মানুষের হাসিকান্নায় ভরা সাধারণ স্বাভাবিক জীবনকে এড়াইয়া চলিতেছে । উপরে গিয়া রাজকুমার টের পাইল, রিণি বড় হল ঘরে গান গাহিতেছে।