পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/২৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

TC e মানিক গ্ৰন্থাবলী রিণি যেন আশ্চৰ্য হইয়া গেল-আমার সঙ্গে গল্প! আচ্ছা বলুন। গল্প তাই জমিল না। একজন যদি মুখ ভার করিয়া বসিয়া থাকে। আর থাকিয়া থাকিয়া সুকৌশলে অতি সূক্ষ্ম ও মাজিত ভাবে খোচা দিয়া জানাইয়া দেয় যে অপর জন মানুষ হিসাবে অতি অভদ্র, গল্প আর চলিতে পারে কতক্ষণ ? কয়েক মিনিট পরেই রাজকুমার উঠিয়া গেল। বিদায় নিয়া রাজকুমার তো ঘরের বাইরে চলিয়া আসিল, সঙ্গে সঙ্গে রিণি আবার আরম্ভ করিয়া দিল তার গানের প্র্যাকটিস। রাজকুমার তখন সবে সিড়ি দিয়া কয়েক ধাপ নামিয়াছে। রিণির গানের সেই অকথ্য করুণ সুর কাণে পৌছানো মাত্র সে থমকিয়া দাড়াইয়া পড়িল । এত তাড়াতাড়ি ৱিণি নিজেকে সামলাইয়া উঠিতে পারিয়াছে! সে তবে লজ্জা পায় নাই, অপমান বোধ করে নাই, বিশেষ বিচলিত হয় নাই ? ব্যাপারটা রাজকুমারের বড়ই খাপছাড়া মনে হইতে লাগিল । সাগ্রহে মুখ বাড়াইয়া দিয়া চুম্বনের বদলে ধিক্কার শোনাটা এমনভাবে তুচ্ছ করিয়া দেওয়া তো মেয়েদের পক্ষে স্বাভাবিক নয় । রেলিং ধরিয়া সেইখানে দাড়াইয়া রাজকুমার ভাবিতে থাকে। তার ব্যবহারকে রিণি অসভ্যতা বলিয়াছিল। লাজ পাওয়ার বদলে সমস্তক্ষণ রিণির কথায় ব্যবহারে ও চোখের দৃষ্টিতে একটা অবজ্ঞা মেশানো অনুকম্পার ভাবই স্পষ্ট হইয়া ছিল। তখন রাজকুমার ভাবিয়াছিল, ওসব প্ৰত্যাখ্যানের প্রতিক্রিয়া। এখন তার মনে হইতে লাগিল, তার মনের সঙ্কীর্ণতার পরিচয় পাইয়া প্ৰথমে একটু রাগ এবং তারপর বিরক্তি ও অনুকম্পা বোধ করা ছাড়া আর কোন প্ৰতিক্রিয়াই বোধ হয়। রিণির মনে ঘটে নাই। শ্ৰীমতী গিরিন্দ্ৰনন্দিনী ও তার মাকে আজ যেমন তার বর্বর মনে হইয়াছিল, তার সম্বন্ধেও রিণির ঠিক সেই রকম একটা ধারণাই সম্ভবত জন্মিয়াছে । এবং সেজন্য রিণিকে দোষ দেওয়া চলে না। সত্যই সে রিণির সঙ্গে ছোটলোকের মত ব্যবহার করিয়াছে। কি আসিয়া যাইত রিণিকে চুম্বন করিলে ? চায়ের কাপে চুমুক দেওয়ার চেয়ে এমন কি গুরুতর নরনারীর আলগা চুম্বন ? একটু শ্ৰীতি বিনিময় করা, একটু আনন্দ জাগানো, মৈত্রীর যোগাযোগকে কয়েক মুহূর্ডের জন্য স্পষ্টতরভাবে অনুভব করা। রিণি তাই চাহিয়াছিল। কিন্তু নিজে সে গিরিন্দ্ৰনন্দিনীর পর্যায়ের মানুষ কিনা, চুম্বনের জের চরম মিলন পর্যন্ত টানিয়া না চলাটাও যে যুবক যুবতীর পক্ষে সম্ভব এ ধারণাও তার নাই। কিনা, তাই সে ভাবিতেও পারে নাই রিণির আহবানে সাড়া দিলেও তাদের সহজ বন্ধুত্বের সম্পর্কটা বজায়