পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/২৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুকোণ R ( ) থাকিবে, অসঙ্গত ঘনিষ্টতায় পরিণত হইয়া যাইবে না। চুম্বন অবশ্য নরনারীর মিলনেরই অঙ্গ, সুপবিত্র কোন আধ্যাত্মিক মিথ্যার ধোয়া সৃষ্টি করিয়া রিণির সঙ্গে তার চুম্বন বিনিময়কে সে ব্যাখ্যা করিতে চায় না। কেন সে ভাবিতে পারে নাই চুম্বনের ভূমিকাতেই সমাপ্তি ঘটানোর মত সংষম তাদের আছে ? চোখ মেলিয়া রিণির রূপ সে দেখিয়া থাকে, কাছাকাছি বসিয়া হাসিগল্পের আনন্দ উপভোগ করে, মাঝে মাঝে স্পর্শ বিনিময়ও ঘটিয়া যায়। কিন্তু আত্মহারা হইয়া পড়ার প্রশ্নও তো তাদের মনে জাগে না । সে কি কেবল এই জন্য যে ওই পর্যন্ত ঘনিষ্টতা দশজনে অনুমোদন করে ? চুম্বন বিনিময়ে অনুমতি দেওয়া থাকিলে তো আজ তার মনে হইত না রিণিকে চুম্বন করা বিবেকের গায়ে পিন ফুটানো এবং একবার পিন ফুটাইলে একেবারে ছোরা বসাইয়া বিবেককে জখম না করিয়া নিস্তার থাকিবে না ! কেবল সে এক নয়, সকলেই এই রকম। অনেক পরিবারে পনের বছরের মেয়েরও বাপ ভাই ছাড়া কোন পুরুষের সামনে যাওয়া বারণ। এমন একটি মেয়ে যদি কেবল চুপি চুপি দুটি কথা বলার জন্যও পাশের বাড়ীর ছেলেটাকে ডাকে, ছেলেটা কি ভাবিবে ? রিণি চুম্বন চাওয়ার খানিক আগে সে যা ভাবিয়াছিল। এমন একটা বিকৃত আবেষ্টনীর মধ্যে তারা মানুষ হইয়াছে যে, অস্বাভাবিক মিথ্যা অসংযমকেই তারা স্বাভাবিক সত্য বলিয়া জানিতে শিখিয়াছে। মানুষ কেবল পরের নয়, নিজেরও সংযমে বিশ্বাস করে না। অসংযমের চেয়ে সংযম ষে মানুষের পক্ষে বেশী স্বাভাবিক, এ যেন কেউ কল্পনাও করিতে পারে না । হঠাৎ রিণির গান বন্ধ হইয়া যাওয়ায় রাজকুমার সচেতন হইয়া উঠিল যে, সিড়ির মাঝখানে সে অনেক্ষণ দাড়াইয়া আছে। তাড়াতাড়ি সে নীচে নামিয়া 6व्ल । নীচে হলঘরের এক কোণে অবনীবাবুর মেয়ে মালতী বসিয়াছিল। সামনে ছোট টেবিলটিতে একটি বই ও খাতা। খুব সম্ভব কলেজ হইতে ফিরিবার সময় স্যর কে, এল-এর বাড়ীতে ঢুকিয়াছে। এখানে একা বসিয়া দু'হাতের আটটি আঙ্গুলে টেবিলের উপর টোকা দিয়া টুকটাক আওয়াজ তুলিবার কারণটা রাজকুমার ঠিক বুঝিতে পারিল না। আট আঙ্গুলে টোকা দেওয়ার কারণ নয়, এখানে একা বসিয়া থাকিবার কারণ। মালতী বড় চঞ্চল। চাঞ্চলটো শুধু আঙ্গুলে সীমাবদ্ধ রাখিয়া সে যে স্থির হইয়া বসিয়া আছে, এটা সত্যই আশ্চর্যের दां°ांद्र ।