পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চিন্তামণি “ওবেলা দুধ দেব দিদিমণি ।” সুনীতি পালিশ করা চকচকে আওয়াজে বললে, “আন্দেক আর আদেক দুধ জল তো। তোমার নামটি কেন গৌরাঙ্গ ? ফর্সা ছিলে বুঝি ছেলেবেলা ? তামাসায় গৌরাঙ্গের প্রাণে আঘাত লাগে। জীবন তার কাছে ভয়ানক ভারী আর গভীর, একটুখানি কুঁড়ে ঘরে বুড়ী মা, কচি বোন আর গাই-বাছুরটি নিয়ে সমারোহহীন যে জীবনটুকু সে যাপন করে। বিয়ে করে গাদাখানেক ছেলেপুলে না। হলে এ ভাবটা তার কাটবে না, বোধশক্তি ভেঁাতা হবে না । খিড়কি দিয়ে গৌরাঙ্গ এ বাড়িতে আনাগোনা করে। মেঠে রাস্তায় তার পথ সংক্ষেপ হয় না, কিন্তু মেঠে রাস্তায় চলে তার আরাম হয়। তার ভারি আশ্চর্য লাগে যে মানুষের পায়ে পায়ে এমন সক সুন্দর নির্দিষ্ট পথ কি করে গড়ে ওঠে। কে সকলকে বলে দেয় কোন আধ হাত পরিসরের মধ্যে পা ফেলতে হবে ? খেলার মাঠের বুক চিরে নতুন পথের রেখা সৃষ্টি হতে দেখেও সে বুঝতে পারেনি কি করে কি হল। প্ৰথমে শুধু কয়েকটি অস্পষ্ট পায়ের চিহ্ন। এখানে ওখানে ছড়ানো, পায়ের চাপে শুয়ে পড়া ঘাস, তারপর মরা ঘাসের বিবর্ণিতার অনির্দিষ্ট রেখা ও ধীরে ধীরে সেই রেখার উদলা মাটির পথে পরিণতি। আরও কি অদ্ভুত ব্যাপার, আবর্জনার পাশ কাটাতে গোড়ার দিকে পথটি যেখানে একটু বেঁকেছিল, আবর্জনা নিশ্চিহ্ন হবার পরেও পথের সে বঁাক থেকে গেল - কেউ চেষ্টা করল না সে বঁাকাকে সোজা করতে। মানুষের এসব একথকতার প্রমাণ বড়ই দুর্বোধ্য আর রহস্যময় মনে হয় গৌরাঙ্গের। গলা কঁাপিয়ে কঁাপিয়ে কথা বেছে বেছে গান রচনা করে সে তার এই অনুভূতিকে রূপ দেবার চেষ্টা করে। বঁকা পথে ছাতিমপাডা ব্যাতি হবে গো উদাস নগরে পথ দেখাবে কে । মানুষ চলা পথে যাবার নাগর কি গো সে ॥ " ठाश ट्रेश् T. , Lữ ( , আলো সই ! নীলকণ্ঠের বাড়ীর খিড়কির দরজার পরেই একটা পড়ে চালা, তার ওপাশ থেকে হাঁটা পথ গেছে দুদিকে। এদিকে মাঠ পেরিয়ে পুকুর ঘুরে বড় রাস্তার ধারে সেই শিরীষ গাছের কাছে, যার তলে দাড়িয়ে থেকে চিন্তামণি, পটলকে সাইকেল থেকে নামিয়ে তার চিঠি পড়ায় । আর পূর্বদিকে পথ গেছে ছোট জঙ্গল ভেদ করে র্তাতিপাড়ার গা ঘেষে গৌরাঙ্গের বাড়ীর দিকে ।