পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/২৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ष्ट्रष्कां१' R গিরির সমবয়সী একটি মেয়ে আসিয়া দাড়ায়। গিরির চেয়ে তার স্বাস্থ্য ভাল, বোধ হয়। সেইজন্যই তার মুখে কচি ডাবের খানিকটা স্নিগ্ধ লাবণ্য আছে। মনোরমার তাগিদ সহিতে না পারিয়া রাজকুমার সরসীর সভার পরদিন সকালে দক্ষিণেশ্বর গিয়া কালীকে নিয়া আসিয়াছে। রাজকুমারের সঙ্গে এত বড় (বার তের কম বয়স নয় গৃহস্থ মেয়েদের ) মেয়েকে পাঠানো সম্বন্ধে নিশ্চিন্ত করিয়া মনোরম আগেই মাসীর কাছে পত্ৰ দিয়াছিল, তবু কালীর মা, মেয়েকে এক ছাড়িয়া দিতে সাহস পায় নাই। কালীর সঙ্গে তার সাত বছরের একটি ভাইও আসিয়াছে। কালী বলে, কি দিদি ? মনোরমা বলে, বললাম যে ? শুকনো কাপড নিয়ে আয় রাজুদার ঘর থেকে। মনোরমার উদারতায় মনে মনে রাজকুমারের হাসি পায়। শ্যামলের জামা কাপড় ভিজিয়া গিয়াছে, আহা, অসুখ যদি করে ছেলেটার ? - ভাবিয়া বড় ব্যাকুল হইয়াছে, কিনা মনোরমা, তাই হাতের কাছে আলনাতে স্বামীর শুকনো কাপড় আলনাতেই থাক, রাজকুমারের ঘর হইতে কাপড় আনা হোক একখানা কালীকে দিয়া। এত হিসাব করিয়া অবশ্য মনোরমা কথাটা বলে নাই। তার মনেও আসে নাই এ মানে। এটা শুধু অভ্যাস। থাক, আমার ঘরে গিয়েই কাপড় ছাড়বে’খন । বলিয়া শ্যামলকে নিয়া রাজকুমার ঘরে চলিয়া যায়। কালী মুচকি মুচকি হাসিতেছে দেখিয়া মনোরমা রাগের সুরে বলে, হাসছিস যে ? কালী তেমনি ভাবে হাসিতে হাসিতেই বলে, তুমি যেন কি দিদি ! বলিয়া এক দৌড় দেয় ঘরের মধ্যে, সেখানে তার মুচকি হাসি শব্দময় হইয়া উঠে ! ঘরে একটিমাত্র চেয়ার, একটির বেশীকে স্থান দেওয়াও মুস্কিল। শ্যামল সেই চেয়ারে বসে, রাজকুমার পা ঝুলাইয়া বসে তার খাটের বিছানায়। এখন তার মনে হইতে থাকে, রাস্তায় সংক্ষেপে কথা সারিয়া শু্যামলকে বিদায় দিলেই ভাল হইত। শ্যামলকে ওভাবে দাড়াইয়া থাকিতে দেখিয়া হঠাৎ অতখানি মমতা ও সহানুভূতি বােধ করিয়াছিল কেন কে জান! মনে হইয়াছিল, ধীর দ্বির শান্তভাবে গভীর আস্তরিকতার সঙ্গে ওর মানসিক বিপ্লব যতটুকু পারা যায় শান্ত করার চেষ্টা করা তার কর্তব্য। মর্মাহত ছোট ভাইটির মত ছেলেটাকে কাছে টানিয়া সাত্মনা না দিলে অন্যায় হইবে । কারণ, তার বয়স বেশী, অভিজ্ঞতা বেশী, জ্ঞান বেশী, ধৈৰ্য ও সহিষ্ণুতা বেশী।