পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/২৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী এমন খারাপ লাগিতেছে এখন! উপদেশ দিয়া এই বয়সের দুরন্ত হৃদয়াবেগসম্পন্ন ছেলেমানুষটিকে শান্ত করা ! সে তো পাগলামির সামিল । একবার চােখ তুলিয়া চাহিয়া শ্যামল অন্যদিকে তাকায়, হঠাৎ কিছু বলিতে পারে না। এ তো জানা কথাই যে মনের মধ্যে তার ঝড় চলিতেছে, কথা আরম্ভ করা তার পক্ষে সহজ নয়। বাড়ীর সামনে রাস্তায় প্রথম ঝোঁকে অনেক কথাই সে বলিয়া ফেলিতে পারিত, এতক্ষণের ভূমিকার পর খেই হারাইয়া ফেলিয়াছে। আপনি ওকে বিয়ে করবেন ? শ্যামলের কথা শুনিয়া রাজকুমার কিছুমাত্র আশ্চর্য হইল না। এই রকম প্রশ্নই সে প্ৰত্যাশা করিতেছিল । একথা জিজ্ঞাসা করছি কেন ? আপনি তা বুঝতে পারছেন। না, বুঝতে পারছি না। তুমি মালতীর অভিভাবক নও, আত্মীয়ও নাও । আমাকে এ প্রশ্ন করার অধিকার তোমার নেই। আমার অধিকার আছে । শ্যামল এমন জোরের সঙ্গে কথাটা ঘোষণা করিল যে কথাটার সহজ মানে বুঝিতে রাজকুমারের একটু সময় লাগিল। মনে হইল সত্য সত্যই মালতী সম্পর্কে অন্য অধিকারও বুঝি শ্যামলের আছে। কিসের অধিকার তোমার ? তুমি নিজে মালতীকে বিয়ে করতে চাও, এই অধিকার ? শ্যামলের মেরুদণ্ড সিধা হইয়া গেল। সোজা রাজকুমারের চোখের দিকে চাহিয়া স্পষ্ট উচ্চারণে প্ৰত্যেকটি কথায় জোর দিয়া দিয়া সে বলিল, বিয়ে করি বা না করি, ওকে আমি স্নেহ করি। আপনাদের ওসব কথার মারপ্যাচ আমি বুঝি না, সোজাসুজি এই বুঝি, মালতীর এতটুকু ক্ষতি হলে আমার সহ্য হবে না। সেই দাবীতে আমি আপনাকে স্পষ্ট একটা কথা জিজ্ঞাসা করেছি, সোজা ভাষায় জবাব দিন । তুমি বড় ছেলেমানুষ শ্যামল। বাজে কথা বলে। লাভ কি ? তারপর দু’জনেই কিছুক্ষণের জন্য চুপ করিয়া গেল। শ্যামল খালি গায়ে বসিয়া আছে, রাজকুমারের শুকনো কাপড়খানা শুধু সে পরিয়াছে, জামা গায়ে দেয় নাই। প্রয়োজনের বেশী সামান্য একটু ভদ্রতাও সে