পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Re মানিক গ্ৰন্থাবলী মরেই গেছে আর রঘু যখন দিশেহারা হয়ে যায়নি সেই মরণে । ঘরে কঁপি কঁপা সুরে মেয়েরা গান করে যায় মড়াকান্নার, পাড়ার আত্মীয় বন্ধু বঁাশ কেটে আনে মাচা বাঁধার জন্য। রঘু এদিক গিয়ে ওদিক গিয়ে ধীরে শান্তভাবে ছটফট করে বেড়ায়, কখনো একটু দাড়ায় অথবা উবু হয়ে বসে, খানিক শূন্যে তাকিয়ে থাকে নিম্পন্দ হয়ে আর দু'এক মুহূর্তের জন্য চামড়া কুঁচকে-কুঁচকে মুখখানা তার বিকৃত হয়ে যায়। দু'টো কলকে অনেকের হাতে হাতে ঘুরছে। রঘু মাঝে মাঝে তামাক টানে আর কাসে । সঁ। সঁা করে বে-কায়দায় টানে বলেই কাসে, নইলে এমন কড়া তামাক ভূ-ভারতে নেই যে রঘুকে কাসাবে, চিটায় মিঠা দা-কাটা তামাকেদ্ৰ তো কথাই নেই। ‘ধর, গৌর।” গলাটা ভারি রঘুর। ভিজে ঢাকের মত ভারি । এইসব মিলেমিশে কখন যে গৌরের হৃদয়ে যথোচিত বেদনা এনে দেয় ! সঁাঝের আঁধার ঘনিয়ে এলে তার হৃদয়ের সেই বেদনাবোধ কি সব কারণে কয়েকবার খিচ ধরে ধরে তার কান্না পায় । দুঃখ তার বৈরাগ্য হয়ে দু’ চোখ দিয়ে গলে গলে পড়তে থাকে। টস টস করে । জীবন-যৌবন ঘর-দুয়ার গরু-বাছুর ক্ষেতের ফসল সব মিছে, এ জগতে কেউ কারো নয়। বৌ কিসের, মেয়েমানুষ কি, সব মায়া, সব ফাকি ! “দুধ লিতে এইছে দাদা ।” গৌরের কচি বােন আন্না তাকে ডাকতে এসেছে। খানিক মূঢ়ের মত বসে থেকে গৌর নীরবে উঠে দাডাল। “যাসনি-গৌর। আ গৌর, যাসনি মাইরি।” “এখুনি এসবো’খন - এক দণ্ডে ।” রঘুর সকাতর অনুরোধ উপেক্ষা করে গৌর বেরিয়ে যায়। রঘুর জন্য তার আর চিন্তা ছিল না। ওর কিছু হবে না। দুধ নিতে এসেছিল চিন্তামণি । তাকে দেখে গৌরের একবার মনেও হল না যে নীলকণ্ঠের চাকর-বাকর কুলি মজুর থাকতে চিন্তামণি কেন দুধ নিতে এসেছে। মনটা তার এতখানি বিগড়ে গিয়েছিল। ছেলেকে দেখেই গৌরের মা ব্যগ্ৰকণ্ঠে জিগ্যেস করল, “বার করেছে ? নিয়ে গেছে ?” গৌর বলল, “না।”