পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৩৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুষ্কোণ \SRE পেয়েছ মালতী ! আজি থেকে তুমি সুখী হবে। শুনিয়া মালতীর ভয় করিতে থাকে। সুখ-দুঃখের কথা সে কখনো ভাবে নাই। সুখে অথবা দুঃখে কোনদিন তার সচেতন হইতে খেয়াল থাকে নাই আমি মুখী অথবা আমি দুখী। নিজের সম্বন্ধে নিজের বিচারে এই হিসাবটা তার চিরদিন বাদ পড়িয়াছে। একটা অজানা মধ্যবিত্ত ফিরিঙ্গি হোটেলের একটি ঘরে তাকে রাখিয়া রাজকুমার স্যর কে, এল-এর সঙ্গে দেখা করিতে চলিয়া গেলে নিজেকে মালতীর বড় অসহায় মনে হইতে থাকে। অপরিচিত আবেষ্টনীতে নিজেকে এক মনে করিয়া নয়, বাচিয়া থাকার মত সহজ স্বাভাবিক ব্যাপারটা হঠাৎ অতি বেশী গুরুত্বপূর্ণ হইয়া উঠিয়াছে বলিয়া। তার নিজের একটা জীবন আছে, জীবন যাপনের কঠিন আর জটিল কর্তব্য তাকে পালন করিতে হইবে, কিন্তু সে কিছুই জানে না, কিছুই বুঝে না। তার বুদ্ধি নাই, সাহস নাই, অভিজ্ঞতা নাই । রাজকুমার যাই বলুক, সে সত্যই ছেলেমানুষ, এতকাল শুধু ছেলেখেলা করিয়াছে, ছেলেখেলা করা ছাড়া আর কোন যোগ্যতা তার নাই । জীবন তো ছেলেখেলার ব্যাপার নয় ! হোটেলটি বড় রাস্ত হইতে খানিকটা তফাতে, পথের শব্দ কানে আসে না । হোটেলটিও ছোট এবং প্ৰায় নিঃশব্দ। হোটেলের লোক খাটে দু'জনের বিছানায় ফর্সা চাদর পাতিয়া পাশাপাশি দু’টি করিয়া বালিশ রাখিয়া গিয়াছে। ছোট গোল চায়ের টেবিলের দু’দিকে দু’খানা চেয়ার । চারটি বড় বড় জানলায় এমন কৌশলে পর্দা দেওয়া যে ঘরের মধ্যে আলো আসে। কিন্তু মানুষের দৃষ্টি আসে না । দেয়াল যেন সবুজ রঙে গম্ভীর হইয়া আছে। ড়েসিং টেবিলে প্রসাধনের আয়োজনের অভাব মালতীর অসম্পূর্ণতার অনুভূতিকে জোরালো করিয়া তোলে। আয়নায় যে মালতীকে দেখা যায় তাকে মালতীর মনে হয়। অন্য একটি মেয়ে । শেষ মুহূর্তে রাজকুমার মালতীকে এক রাখিয়া স্যর কে, এল-এর সঙ্গে দেখা করিতে যাওয়ার ব্যবস্থাটা বাতিল করিয়া দিতে চাহিয়াছিল, মালতী রাজী হয় নাই। না, সব হাঙ্গামা চুকিয়ে দিয়ে এসো। আমার সঙ্গে কথা বলবে, আর মনে মনে ভাববে। রিণির বাবা কি জন্যে ডেকে পাঠিয়েছেন, আমার তা সইবে না । তা ভাবিব না। মালতী ! ওটুকু মনের জোর আমার আছে। মনের জোরের কথা নয় । রাজকুমার, চলিয়া যাওয়ার পর আধা ঘণ্টার মধ্যে মালতী অস্থির হইয়া উঠিল। সময় যে এত শ্লথ, শুইয়া বসিয়া ঘরের মধ্যে পাক দিয়া আর ক্রমাগত