পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

fs চোখ মেলে চাইলেই শরৎকালের শোভা নজরে পড়ে, সে শোভার রঙ ভারি সবুজ। লাল ধুলোর কথা তুলে গৌরের এদেশকে নিন্দে করার ছুতো চিন্তামণির বর্ষায় ভেসে গিয়েছিল, এখন যদি বা এখানে ওখানে শুকনো কাদার ডেলা গুড়িয়ে ধুলো উড়ছে দু'এক ঝলক, সেটা কিছু নয়। কুয়াশার দিনগুলি পেরিয়ে গিয়ে আবার ভালো করে ধুলো উড়তে সুরু হবে, ফান্থনের দখিণায় হবে তার ওড়নের চরম বড়াই । মাঠের কাজ শেষ হয়ে যাবার পর থেকে অলস অকৰ্মণ্য জীবন যাপন করতে করতে সবাই হাঁপিয়ে উঠেছে। ধান কাটার সময় এলো এই যা ভরসা। শীষের প্রৌঢ়তা প্ৰাপ্তির দিন থেকে সবাই নজর পেতে আছে ধানে রঙ ধরবে কবে। খাটুনি আসবে কঠিন, ঝর ঝর ঘাম ঝরবে, গায়ে হাতে ব্যাথ্যা হবে, কোমর বঁাকা হয়ে যাবে তাদের বয়স যাদের একটু বেশী হয়েছে। কাজে সুখ নেই, বড় কষ্ট কাজে। নতুন আলু, সোনালী আখ, শাক-সজী, বুট মটর সব কিছু কাটা তোলা ধোয় চাছ বয়ে নেওয়া যোগান দেওয়ার কাজে । কাজ সুরু করার খানিক পরেই মনে হবে কি যেন নেই শরীরে, -একটুখানি ছিল কিন্তু ফুরিয়ে গেছে। তারপর থেকে বাকী দিনের কাজ শুধু সহ করার ধৈৰ্য্য দিয়ে, বাঁধা গতিতে বাধা নিয়মে কলের মত। গৌর যে এমন ব্ৰহ্মচারী যুবক, খেটে যাতে সুখ মেলে তা তারও যেন শরীর মনে মোটে ছটাকখানেক আছে। অকেজো দিনগুলির চাপে কাতর। হয়ে পড়ে বলেই তার কাজের কষ্ট চায়। বছরে কতকাল যে চাষীর বেকার কাটাতে হয়! সবাই নয়। নিজের ও ছেলেমেয়ে মা-বোনের সরু হাড় আর অলম্ব মাংসপেশী কোনমতে যারা টিকিয়ে রাখতে পারে তারা অন্য কাজ খোঁজে না। মজুর হতে থাটি চাষী মরমে মরে যায়। ভূমিহীন চাষী পর্যন্ত। পরের জমিতে মজুৱগিরিই সে করে, তৰু চাষ আবাদ ছাড়া আর কিছু করে না সে চাষী । সদয়, পচা, ছোলেমান, মৈনুদ্দিন কয়েক টুকরো জমি চাষে বটে। কিন্তু তােতও বোনে বলে তারা তঁাতি। আকবর, যদু, নাসের, সুখলাল ফসল বোনা আর ফসল তোলার সময় ছাড়া বাড়ী থাকে না, কয়লা তুলতে যায় ঝরিয়ার খনিতে, ওরা তাই