পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৩৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আজ কাল পরশুর গল্প Vy রামপদকেও বসায়। মুক্ত এতক্ষণ পরে সরে এসে সুরমার পিছনে গা ঘেষে মাটিতেই বসে। ঘোমটা তার ছোট হয়ে গেছে। ছোট ঘোমটার মিথ্যে আড়াল থেকে একদৃষ্টি সে তাকিয়ে থাকে। রামপদা’র মুখের দিকে ] বৌয়ের চোখে এমন চাউনি রামপদ কোন দিন দ্যাখেনি। এ সমস্যা তুচ্ছ করার মতো নয়। এক জন বড় মাতবর আর তার ধামাধৱ ক'জন তুচ্ছ লোক রামপাদ’র পারিবারিক ব্যাপারে নিয়ে কর্তালি না করতে এলে এ হাঙ্গামা ঘটত না। দু’চার জন হয়তো ঠাট্টা বিদ্রুপ করত কিছু দিন, দু-চার জন হয়তো বর্জনও করত রামপদকে, কিন্তু সাধারণভাবে মানুষ মাথা ঘামাত না । চারিদিকে যা ঘটেছে আর ঘটছে তার কাছে। এ আর এমন কি কাণ্ড ? নী খেয়ে রোগে ভুগে কত মানুষ মরে গেল, কত মানুষ কত পরিবার নিরুদেশ হয়ে গেল, কোন বাড়ীর দশ জন কোথায় গিয়ে ফিরে এল মোটে দু’জন ধুকতে ধুকতে, কত মেয়ে-বৌ চালান হয়ে গেল কোথায়, এমনি সব কাণ্ডের মধ্যে কার বৌ কোথায় ক’মাস নষ্টামী করে ফিরে এসেছে, এ কি আবার গণ্য একটা করার মতো ঘটনা ? এ যেন প্ৰলয়ের সময় কে কার ডোবার জল নোংরা করছে তাই নিয়ে ব্যস্ত হওয়া । কিন্তু ঘনশ্যামেরা ক’জন যখন গায়ে পড়ে উস্কে দিতে চাইছে। সবাইকে, কি জানি কি ঘটবে। সুরমা জিজ্ঞেস করে, “যাই হোক, বৌয়ের জন্য ভাত তো রেখেছি রামপদ ? “আজ্ঞে আপনার ?” “আমাদের ব্যবস্থা আছে। বৌকে দু'টি খেতে দাওতো তুমি । চালাটা তোলোনি কেন ? ‘তুলব। তুলব।’ W সুরমাই বলে কয়ে নিয়ে দু'টি খাওয়ার ছলে মুক্তাকে ভিতরে পাঠিয়ে দেয় রামপদ’র সঙ্গে। বাইরে যা ঘটুক, ওদের মধ্যে আগে একটু কথা আর বোঝাপড়া হওয়া দরকার। গ্রামের এক জন কর্মী শঙ্করের বাড়ীতে তাদের এবেলা নাওয়া-খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। অনেক আগেই তার এসে পড়া উচিত ছিল। গ্রামের অবস্থা সে ভালো জানে। তার সঙ্গে পরামর্শ করবারও দরকার হবে। ঝাপটা উচু করে তুলে দিতে আরেকটু আলো হয় ঘরে। ‘নাইবে?” রামপদ শুধোয়। 亨 “মোর জন্যে রোধে রেখেছে !’ বলে মুক্ত । “শোলের ঝাল আর ভাত। আলুনি হৈছে কিন্তু ?