পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Vy মানিক গ্ৰন্থাবলী লোক দুটির ঠাণ্ডা সাহচর্যে জুড়িয়ে গিয়ে ক্রমেই মনটা দমে যাচ্ছে, একটু বোকা মনে হচ্ছে নিজেকে। সনৎ মোক্তারের হাতে গিয়ে যে কি করে পড়ল তাও সে এখন ঠিকমত ঠাহর করে উঠতে পারছে না । তার জন্যই যেন ওৎ পেতে অপেক্ষা করেছিল। সনৎ মোক্তার, ছো মেরে তাকে আত্মসাৎ করে ফেলেছিল চোখের পলকে । খানিক আগে পর্যন্ত তার মনে হয়েছিল ওর মত ক্ষমতাবান দরদী ও শুভাষী যেন জগতে আর নেই, এই একটি লোকের হাতে সব ভার, সব দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে নিৰ্ভয় নিশ্চিন্ত হয়ে সে ঘুমোতে পারে । নালিশ করার আগে রঘুর সঙ্গে একবার পরামর্শ করার কথা বা মাকে একবার জানাবার কথা পৰ্যন্ত তার মনে পড়তে দিল না। সনৎ মোক্তার ! বাড়ুৰ্য্যে বলল, “ফসল চাদাকাকা বেচে দিয়েছে জানিস ? নীলকণ্ঠবাবুকে বেচে দিয়েছে, তোদের ওই করেনাম নীলকণ্ঠবাবুকে ।” ভসের জেদি সাঃ সে গৌর বলল, “বেচে দিকনা। টাকার ভাগ দেবে।” সাহসটা আরো বেশী প্ৰকট করে দেখাতে চেয়ে রহিমকে বলল, “দু’আনার দামটা তোমায় দেব, তুমি ভেবোন ।” আর দুজন খদের এসেছে সওদা নিতে - ছেড়া ময়লা শাড়ী পরা শীর্ণ রুক্ষ একটি বৃদ্ধ আর পথে কুড়ানো তালি দেওয়া হাফপ্যাণ্ট পরা সাত আট বছরের একটি ছেলে। বাড়িয্যে এদের সওদা দেয় না, বাম প্রান্তে নীচু কাঠের বাক্সে বসে এদের কম কম জিনিস দেয়। বদ্যি । বদ্যির চারিপাশে মুদীখানার সব জিনিসই সাজানো আছে, তবে ছোট ছোট পাত্রে, কম পরিমাণে । বঁাডুয্যের এই আড়তের মত বড মুদী দোকানের কোণে ওখানে যেন আরেকটি ছোটখাট ভিন্ন দোকান করা হয়েছে। বদ্ব্যির বাটখারাটিও ছোট - অনেকের অধিকাংশ সওদা দিতে সেটা ব্যবহারও হয় না । এক পয়সা আধ পয়সার জিনিষ কি কেউ ওজন করে বেচে । বুডি বলে, “এক ছিদাম নুন, এক ছিদাম ধনে, আধিপয়সা - * বদ্যি বলে, “ছিদাম নেই গো ! আধিপয়সার কম নেই।” ক’মাস আগেও ছিদামে বেচা ছিল। মোট এক পয়সা পূৰ্ব্বলেই হত। কেবল বাড়ুয্যের দোকানে নয়, অনেক দোকানেই। দু'পক্ষেরই এতে লাভ। শাকপাত শুকা বা মেছােবাজার কসাই খানার কুড়ানাে পটকা হাড় কঁাটা, নাড়ী ভূড়ী কাণ যাকে রাঁধতে হবে দু’পয়সার তেল মশলায়, সে একটু একটু সব জিনিষ কিনতে পারে। ছিদামের জিনিষ বলে দোকানীও এতটুকু দিতে পারে জিনিষ যে একসের জিনিষ বেচে দাম ওঠে দু’সেরের। রমেশবাবু একবার এক ছিদামের