পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

3 o N9 মানিক গ্রন্থাবলী লাফাতে ডুয়েট গান করতে দেখেও তার হাসি পেল না, বরং বেশ মিষ্টি আর রসালই লাগলো ব্যাপারটা । মসগুল হয়েই পুলকেশ। শেষ পর্যন্ত ছবিটা দেখে ও শুনে গেল। পরের শনিবার অফিসের এক সহকমীর সঙ্গে সে আবার সিনেমায় গেল। পরের সপ্তাহে গেল। তিনবার । কয়েক মাসের মধ্যে সে নিয়মিতভাবে সিনেমায় যেতে এবং ভালমন্দ নিবিচারে ছবিগুলি তন্ময় হয়ে দেখতে আরম্ভ করল। বন্ধুদের সঙ্গে ছবি আর তারকাদের বিষয় আলোচনা ও তর্ক করে কেটে যেতে লাগিল ঘণ্টার পর ঘণ্টা । একদিন ম্যাটিনিতে নাচে গানে প্ৰেমে বিচ্ছেদ আর শেষ মিনিটের মিলনে এক জমকালো ছবি দেখে পুলকেশ বাইরে এসেছে, দেখা হল যতীনের সঙ্গে । টিপি টিপি বৃষ্টি পড়ছিল, যতীন ছাতি মাথায় দিয়ে হাটছিল ফুটপাতে। যতীনকে হঠাৎ দেখে পুলকেশ চিনতে পারত। কিনা সন্দেহ। তার শরীর ভেঙে পড়েছে, মুখে খোচা খোচা দাডি, পরনে আধময়লা জাম-কাপড়। যতীন নিজেই তাকে দেখে কাছে এগিয়ে এল । এতদিন পরে দেখা, কিন্তু এমনি নিজীব হয়ে পড়েছে দু’জন যে উল্লাসটা তেমন জোরালো হল না। কিছুটা আশ্চৰ্য আর কিছুটা খুন্সী হয়ে পুলকেশ বলল, “যতীন । কলকাতা এলি কবে ?” যতীন বলল, “মাসখানেক । তোর বাড়ী যাব যাব ভাবছিলাম, হয়ে ওঠেনি।” যতীনের মুখে পুলকেশ মদের গন্ধ পায়। চোখে দেখতে পায় নেশার আবেশ । কথায় একটা অস্বাভাবিক টলোমলো প্ৰফুল্লতা। দুই বন্ধু কথা বলে ধীরে সুস্থে, খবর নেয়। আর দেয় ছাড়া ছাড়া ভাবে । এতগুলি বছর ধরে অজস্ৰ কথা জমেছে কিন্তু বলার বা শোনার তাড়া যেন তাদের নেই । যতীন বলে, “আয়, বসে কথাবার্তা কই ।” “কোথায় বসবি ? “আয় না । কাছেই ।” খানিক এগিয়ে বঁায়ে গলির মধ্যে একটা দেশী মদের দোকানে যতীন তাকে নিয়ে যায় । শনিবারের বিকাল, ইতিমধ্যেই লোক জমে জায়গাটা গামগম করছে - ছেড়া কাপড় পরা খালিগায়ের লোক থেকে ফরসা জামাকাপড় পরা পৰ্যন্ত সব ধরণের বাঙ্গালী ও অবাঙ্গালী লোক। দোকানঘরের বেঞ্চিগুলি সব ভর্তি, দাড়িয়ে এবং উবু হয়ে বসেও অনেকে মদ খাচ্ছে। পাশের ঘরে একটা বেঞ্চে জায়গা