পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 y o মানিক গ্ৰন্থাবলী জনাৰ্দন আপত্তি ক’রে বলেছিল আড়াল-করা বেড়া সৱালে সদর বেড়ার কোণের পুরনো পথের ফাকে রাস্তার লোক যে তার বাড়ীর বৌ-ঝিদের দেখতে পাবে, তার কী হবে ? সে এমন কী অপরাধ ক’রেছে যে, গাটের পয়সা খরচ ক’রে তাকে বন্ধ ক’রতে হবে বেড়ার ফাক । রীতিমত সমস্যার কথা । সালিশরা যখন মীমাংসা খুঁজতে মাথা ঘামাচ্ছেন, গোবৰ্দ্ধন উদার ও উদাসভাবে বলেছিল, তিন হাত বেড়ার ফ্ৰাক-বন্ধ করার পয়সা খরচ করতে যদি জনার্দনের আপত্তি থাকে, সে এদিকের অংশ নিক । সদর বেড়ার ফাকের অসুবিধা ভোগ করতে গোবৰ্দ্ধন রাজী আছে । অনেক তর্ক-বিতর্কের পর সালিশরা হঠাৎ সমস্যাটার চমৎকার মীমাংসা আবিষ্কার করেন । কেন, দু’পাশে দু'হাত করে পথ করতে সদর বেড়ার মাঝখানে চার হাত অংশ তো কাটতেই হবে, তাই দিয়ে অনায়াসে বন্ধ করা যাবে জনার্দনের অংশের সদর বেড়ার পুরনো ফাক ! এমনি দুৰ্য্যোধনী জেদি হিংসার চুলচেরা ভাগাভাগির প্রতীক হ’য়ে ভাগের বেড়াটি দাড়িয়ে আছে সাত বছর Kबनष्ठ হাতীর শ্রাদ্ধের দশ দিন পরে বেড়াটা উঠেছিল ! আদালত কুরুক্ষেত্রে তারপর যত লড়াই হ’য়ে গেছে দু’ভায়ের মধ্যে জমিজমা নিয়ে, যত হাতাহাতি গালাগালি হ’য়ে গেছে বাগানের ফল, পুকুরের ঘাট, গাছের মর্য ডালের ভাগ নিয়ে তারও যেন প্ৰতীক হ’য়ে আছে। এই বেড়াটিই । জীৰ্ণ হ’য়ে এসেছে বেডাটা, এখানে ওখানে মেরামত হ’য়েছে, আর এখানে পড়েছে মাটির চাবড়া, ওখানে গোজা হ’য়েছে ন্যাকডা, সেখানে সঁটা হ’য়েছে কাগজ । বেডার ফুটােয় চোখ রেখে উকি মারা চলত - দু’পাশ থেকেই। হঠাৎ গোবর গোলা জল বেড়া ডিঙিয়ে এসে পডত গায়ে । গোবৰ্দ্ধনের মেয়ে পরীবালা একদিন চােখ পেতে আছে বেড়ার ফুটায়, জনার্দনের মেয়ে তাকে তাকে থেকে একটা কঞ্চি সেই ফুটো দিয়ে চালান ক’রে দিল তার চোখের মধ্যে । চোখ যায় যায় হল পরীবালার, মাথা ফাটে ফাটে হল গোবর্ধন ও জনাৰ্দন দু’ভায়ের, ক’দিন পাড়ায় কাণ পাতা গেল না দু’বাডির মেয়েদের গলাবাজীতে ৷ বেড়ায় কঁথা-কাপড় শুকতে দিলে অদৃশ্য হ’য়ে যেত। এটাে-কঁাটা, নোংরা, ছেলেমেয়ের মল বেড়া ডিঙিয়ে পডত একপাশ থেকে অন্যপাশে। এ পাশের পুই বেড়া বেয়ে উঠে ও পাশের আয়ত্তে একটি ডগা একটু বাড়ালেই টেনে যতটা পারা যায় ছিড়ে নেওয়া হত ৷ বেড়া ডিঙিয়ে অহরহ আসা-যাওয়া করত সমালোচনা, মন্তব্য, গালাগালি,