পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8Rf মানিক গ্রন্থাবলী কেদার রাগ করে বলল, “করবার কিছু নেই মানে ? “কি আছে বলুন ? “ওই যে বললাম, সকলে মিলে চেষ্টা করতে হবে ? বেশ বুঝা যাচ্ছিল কেদারের বক্তৃত। কৈলাসের মন রীতিমত নাড়া খেয়েছে, এ কথায় সেও যেন রেগে গেল, “আপনি তো বলে খালাস চেষ্টা করতে হবে বলে । কী চেষ্টা, কিসের চেষ্টা তা বলুন ? তারপর সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে বলল, “যাক যাক আমার ওসব কথায় কাজ কি ? আপনার ছেলের জর কমেছে কেদারবাবু?— আমার সেই টাকাটা নকুড় ?” নকুড় কাছে এগিয়ে এল, নীচু গলায় বলল, “আজ তো লাড়াব কর্তা ।” কৈলাস মাথা নেডে বলল, “তাকি হয় হে, আজি না পারলে কবে পারবে ? ‘পরশু। ধান বেচার টাকা পেয়েছি, তিন টাকা তিন পয়সা দিতে পারবে না ?” নকুড় বিড়বিড় করে কি বলতে লাগল, কারও কাণে গেল না । হঠাৎ কেদার বলল, “আপনিই বা এমন নাছোড়বন্দী কেন মশায় ? গরীব মানুষ এত করে বলছে, তিনটে টাকার তো মামলা, কদিন পরেই না হয় আদায় করবেন ? - আচ্ছা, এই নিন, আণমি দিচ্ছি। আপনার তিন টাকা শোধ করে । তুমি তোমার সুবিধে মতো আমায় টাকাটা দিও নকুড়, আর যাদ নেহাৎ নাই দিতে পার - ” নকুড় প্রথমটা থতিমত খেয়ে গিয়েছিল, কেদারকে মনিব্যাগ হতে টাকা বার করে কৈলাসের দিকে বাড়িয়ে দিতে দেখে তাড়াতাডি ঠিক মাজিক ওয়ালার মতো কোমরের ভঁাজ হতে ঠিক তিন টাকা তিন পয়সা বার করে ফেলল। টাকাটা কৈলাসের হাতে দিয়ে লজ্জার হাসি হেসে সবিনয়ে কেদারকে বলল, “না, বাবুমশায়, না । মোর থেকে মিটমাট হয়ে যাকগা-হাঙ্গামায় কাজ কি ?

  • তারপর কৈলাস বলল, ‘এবার ফিরবেন তো ? চলুন। এক সঙ্গেই যাই ।”

কৈলাসের আরও কয়েকটি আদায় বাকী ছিল, কেদারও ঠিক করেছিল। কিছু তফাতের আরেকটি পাড়া আজি ঘুরে যাবে। নিজের কাজ বাতিল করে দুজনে একসঙ্গে ফিরে চলল। পাশাপাশি, নিঃশব্দে – অনেকটা বন্ধুর মতো। কৈলাস নিজে হতে কথা পাড়বে না। বুঝে কেদার শেষে বলল, “আপনি বড় নিষ্ঠুর ।” কৈলাস বলল, "কী করি বলুন, উপায় কি!” “আপনার মন বড় ছোট ।” "তা বটে । একজনের তিনটে টাকা বলে উদারতা দেখালেন, ওরকম দু’শো 'চারশো হলে করতেন কি ? এখনও প্ৰায় তিনশ লোক আমার কাছে টাকা ধারে ।”