পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শক্ৰমিত্র আদালতের বাইরে আবার দেখা হয়। দুজনের, পানবিড়ি চা মুড়ি মুড়কি আর উকিল মোক্তারের দোকানগুলির সামনে । দু’জনে তারা পরস্পরের দিকে তাকায়। তীব্র বিদ্বেষের আগুনে যেন পুড়ে যায় দু’জোড়া চোখ। দাতে দাত চেপে চাপা গলায় রসুল একটা অকথ্য কুৎসিত কথা বলে । কথাটা দামোদরের কাণে যায় না, ভিতরের হিংসার ধাক্কাতেই সে হাত দুটাে মুঠো করে রসুলের দিকে দু’পা এগিয়ে যায় নিজের অজান্তে, উচ্চারণ করে বিশ্ৰী একটা অভিশাপ, তারপর লাল কঁাকর-বিছানো পথ ছেড়ে ঘাসের উপর দিয়ে হন হন করে চলতে আরম্ভ করে কিছুদূরের বড় বট গাছটার দিকে। বটের ছায়ায় অনেক লোক। কেউ বসে আছে, কেউ দাড়িয়ে। গাছটার গোড়ার দিকে ঘেষে বসে চাপা আকাশ পাতাল ভাবছিল। তার মুখের ভাবটা ভ্ৰকুটিগ্ৰস্ত। পাশে বসে বিড়ি টানছিল দেবীর মহেশ্বর। মহেশ্বরের তৈলহীন রুক্ষ চুলে নিখুঁত ভাজের টেরি। দুপুরের ঝাঁঝালো চারিদিক ঝলসে যাচ্ছে। বটের বিস্তীর্ণ গাঢ় ছায়া পৰ্যন্ত গরম। প্ৰতাপগড়ের বাস ছাড়বে সেই বিকেলে, আদালতের কাজ শেষ হওয়ার পর। এখানেই সময় কাটাতে হবে সে পৰ্যন্ত । “ফের আসতে হবে তোমাকে ? চাপা তধোয় । এগার বছরের পুরনো উড়নী বঁচিয়ে ক্টোচার খুটে কপালের ঘাম মুছে দামোদর বলে, “হ্যা, শালারা সময় নিল বেগতিক দেখে। সাতাশ তারিখ।” একে দুয়ে দামোদরের অন্য সাক্ষীরা এসে সেখানে জোটে, মোট পাঁচজন । মাথার কাপড় চাপা আরেকটু টেনে দেয়। আগে অনেকবার ভেবেছে, এখন অনেকবার ভাবছে, তসরে তাকে কি ছাই মানিয়েছে কে জানে- আর কপালের প্ৰকাণ্ড চওড়া সিঁদুরের ফোটায়। এ বুদ্ধিটা বাতলিয়েছে বুদ্ধিমান কেদার উকিল।