পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88 R शॉनिक @हांदकी স্বদেশীবাবুৱা বললে, যে যা জানো থানায় বলবে। বলিছি থানায় ? থানায় মোরা বলতে যাই নি ঠাকুরবাবু ভালোমন্দ। যা বলি তাতেই গুতো । বলাবলি করেছি নিজেদের মধ্যে। তােমার তাতে কি ?” ‘নে নে মোট তোল ।” গৌতম বলে খুলী হয়ে, ‘চটিস কেন ? আট আনা বেশী পাবি আজ, যা ।” রাঘব নিঃশব্দে বোেচকা মাথায় তুল নেয়, গৌতমের সাহায্যে। ছেদো দর্শনের কথা শোনায়, যে কথা শুনিয়ে শুনিয়ে মেরে রাখা হয়েছে কোটি গৌতমকে বহুকাল ধরে : কি ভাবে ভালো থেকে মরলে লাভ আর কি ভাবে খারাপ হয়ে বঁাচলে লোকসান । তেজী গলায় গৌতম কথা কয়। শুনে গলা বন্ধ হয়ে আসে। রাঘবের । মন তার মাথা কুটে বলে, হায় কি করিছি, হায় কি করিছি। ! পরের গায়ে রাঘবের ঘর, ফুলবাড়ী আর মালদিয়ার প্রায় মাঝামাঝি । এটাকে মোটামুটি গণ বলা যায়। খান ত্রিশেক ঘর আছে, আসল পথের সমান চওড়া পথ *আছে গা পৰ্যন্ত সাত আট রশি, নামও আছে গায়ের-পত্তি। এইটুকু এসে রাঘব বোচক নামিয়ে রাখে। আঙ্গুল দিয়ে শুধু কপালের ঘাম ঝেড়ে ফেলে খ্যান্ত হয় না, বেঁচেকার ওপর চেপে বসে বেশ আনন্দ অন্তরঙ্গতার সুরে বলে, “একটা বিড়ি দেন গো ঠাকুরবাবু!” সাত আট রশি দূরে খান ত্ৰিশোক ঘরের নামওয়ালা বৃস্তি-গা, এটাও যেন খানিক আগের দশ-কুঁড়ে গা-টার মতো নিঃশব্দ, জনহীন মৃত । উলঙ্গ ছেলেমেয়ে পর্যন্ত ছুটে আসে না পয়সা ভিক্ষা করতে, পথ দিয়ে পথিক কেউ যাচ্ছে কি যাচ্ছে না, তাতে যেন কিছু এসে যায় না। তাদের। পত্তাগায়ের দক্ষিণে ঘন জঙ্গল, নীচু জমিতে বছরে ছ’মাস বর্ষার জল জমে থাকলে শোভাহীন বর্ণহীন বীভৎস জলজ জঙ্গল জন্মে। ঝিল্পীর ডাকে সন্ধ্যার স্তব্ধতা, অন্ধকার রাত্রির ইঙ্গিত, এখনো সন্ধ্যা নামে নি । বাইরে সন্ধ্যা না নামলেও ঘরগুলির ভিতরে যে গাঢ় অন্ধকার ঘনিয়েছে রাঘব তা জানে! গৌতমও জানে। এ অঞ্চলেরই মানুষ তো সে। রাঘবকে ধমক দিতে গিয়ে হঠাৎ শিশুর কান্না কানে আসায় গৌতম চমকে উঠে থেমে যায়। কে যেন চাপা দিয়েছে শিশুটির মুখে। গা ছম ছম করে গৌতমের । এই জল-জঙ্গল, কুঁড়ে, পথ আর এই গামছা-পরা মানুষ এসব পুরনো সবকিছু যেন নতুন নতুন মনে হয়, গায়ের শব্দহীন স্তব্ধতায়, মানুষের সদৃশ্যতায়, শিশুর কান্নার মুখ-চাপায়, বেঁচেকায় বসবার ভঙ্গিতে। রাঘবকে সে বিড়ি দেয়। নিজে বিড়ি ধরাবার আগেই রাঘবকে দেয়। বলে,