পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8VR মানিক গ্ৰন্থাবলী কথা না ভেবে, তাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে দেশের জন্য স্বামী তার জেলে যেতে পারে, এর আঘাত হয়তো তাকে একেবারে বদলে দিতে পারে। তার জেলে থাকার সুদীর্ঘ সময়টা এ বিষয়ে চিন্তা করে করে হয়তো সে বুঝতে শিখবে জীবনের গুরুত্ব কতখানি। হাল্কা স্বার্থপর অর্থহীন জীবনের ওপর হয়তো তার স্থায়ী বিতৃষ্ণা এসে যাবে। জেল থেকে বেরিয়ো হয়তো সে সুখী হতে পারবে গীতাকে নিয়ে, তাদের মধ্যে সামঞ্জস্য আসবে। দেশ ও সমাজের কথা একটু ভেবে, পদে পদে বিরোধিতা করার বদলে কিছু কিছু কাজ আর ত্যাগ স্বীকার করে হাসি মুখে। পথের মানুষকে আজ তার সুখী মনে হয় । তার মতো। ওদের কারো জীবনেও বিরামহীন প্ৰতিকারহীন সংঘর্ষ স্থায়ী রোগযন্ত্রণার মতো একটানা অশান্তি এনে দিয়েছে কিনা - প্ৰতিদিনের এই প্রশ্ন আজ যেন মন থেকে মুছে গিয়েছে। একটা কথা অবশ্য প্রমথ জানে । নিজের কাছে। এ বিষয়ে তার ফাকিবাজি নেই। দেহ,মন তার এমনভাবে হাল্কা হয়ে যাবার কারণ অন্য কিছুই নয়, গীতার হাত থেকে মুক্তি পাবার কল্পনাই তাকে এভাবে ভয়মুক্ত করে দিয়েছে। এ-কথাটাকে সে আমল দেয় না, এ নিয়ে ভাবে না। মুক্তিলাভের এ পথ বেছে নেবার আরেকটা দিকও তো আছে। যত অসহাই হোক গীতাকে জীবন থেকে ছেটে ফেলে রেহাই পাবার যত সহজ, সাধারণ, হীন পথই খোলা থাক, ওভাবে সে মুক্তি পাবারও চেষ্টা করে নি, অবস্থার প্রতিকারের অন্যায় ব্যবস্থাও করে নি। স্বামী ও প্রেমিকের কর্তব্য সে পালন করে গেছে বরাবর । গীতাকে ভাল করে জেনেশুনেও ওকে ভালবেসে বিয়ে করার ভুলটা তার, সে ভুলের জন্য গীতাকে শাস্তি দিয়ে মনের জালা জুড়োবার মতো অন্যায় সে কোনদিন করে নি। এ উপায়ের কথা না ভাবলে, এ সুযোগ না পেলে, চিরদিন সে এই আত্মবিরোধভরা বন্দীর জীবনটাই যাপন করত ! এ গৌরব সে দাবী করতে পারে। । বাড়ীতে ঢুকতে প্ৰথমেই চােখে পড়ল ছোটভাই সুমথের কচি ছেলেট, বারান্দায় এই আবেলায় ঘূমিয়েছে। বিয়ের দু’বছরের মধ্যে একটি ছেলে হয়েছে সুমথের, চারবছরের বেশী হয়ে গেল গীতাকে সে একটি সন্তানের মা হতে রাজী করাতে পারল না । মনে মনে সঙ্কল্প আরও দৃঢ় হয়ে যায় প্ৰমথের । গীতা বাড়ী ছিল না। নতুন কিছু নয়, আপিস থেকে বাড়ী ফিরে গীতার সঙ্গে তার কদাচিৎ দেখা হয়। জামাকাপড় ছেড়ে স্নান করার পর সুমথের স্ত্রী তাকে চা জলখাবার দেয়, তার গভীর মুখ দেখে মমতা অনুভব করে। এক সময় স্বামথকে সে বলে, ‘দাদার মুখ বড় ভার দেখলাম।”