পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিস্থিতি 8tr\o এমন ভয় দেখাইয়া দিলেন যে মাসকাবার পর্যন্ত অপেক্ষা করিতে আর ভরসা। হইল না, ধার করিয়াই জিনিসগুলি কিনিয়া আনিল। মাস ছয়েকের খাদ্য বাড়িতে সঞ্চয় করা আছে। তবু আরও কিছু অবিলম্বে এই দণ্ডে সংগ্ৰহ করিয়া ফেলাই ভাল। মুদি ওয়ালা কি সহজে ধার দিতে চায় । বিশ বছরের যে খদ্দের, তাকে পর্যন্ত কয়েক দিনের জন্য বাকি দিতে সে নারাজ। বিকালে টাকা পাঠাইয়া দিবে। প্ৰতিজ্ঞা করিয়া। তবে ধনেশ জিনিসগুলি পাইয়াছিল। পুলককে দিয়া টাকা পাঠাইয়া দিয়াছিল, এখনও সে ফেরে নাই । ক’দিন সে বাডি ফিরতে এমনি রাত করিতেছে। কোথায় যায়, কি করে ছেলেটা, কে জানে। সেও যেন কেমন হইয়া গিয়াছে। তিনচার বছর আগে যখন তার পনেরষোল বছর, অকারণে তার চেহারা খারাপ হইয়। যাইতে আরম্ভ করিয়াছিল, মুখ বিবৰ্ণ হইয়া গিয়াছিল, স্বভাব হইয়াছিল মেয়েদের মত লাজুক, চােখ তুলিয়া কারো মুখের দিকে চাহিবার ক্ষমতা ছিল না । ছেলে-বয়সের কদভ্যাস ছেলেকে ধরিয়াছে টের পাইয়া কত রাত্ৰি ধনেশের তখন ঘুম আসে নাই। তার পর ছেলের চেহারায় লাবণ্য ফিরিয়া আসিলে, স্বভাব স্বাভাবিক হইলে, ধনেশের যেন দুঃস্বপ্নের ঘোর কাটিয়া গিয়াছিল। খাইতে খাইতে ধনেশের মনে পড়িল, কিছুদিন হইতে পুলকের চেহারা আর চালচলনে আবার যেন সেই আগেকার শোচনীয় পরিবর্তন দেখা দিয়াছে। দেখিয়াও এতদিন সে দেখে নাই । চারিদিকের অস্বাভাবিকতার পীড়নে, তার দিশেহারা ভয়-ভাবনার ছোয়াচে, আবার কি। ছেলেটা বিগড়াইয়া গেল ? মুখে ভাত রুচিল না। অর্ধেক খাইয়া ধনেশ উঠিয়া গেল। তামাক টানিতে টানিতে প্ৰতীক্ষা করিতে লাগিল পুলকের। আজ একবার ভাল করিয়া ছেলেটাকে চাহিয়া দেখিতে হইবে, তার কি হইয়াছে। সকলের খাওয়া শেষ হইয়া গেল, সংসারের কাজ ফুরাইয়া গেল। শুধু আলো জালিয়া ধনেশ আর উমা বসিয়া রঙ্গিল ছেলের অপেক্ষায় । শ্রান্তিতে ধনেশের শরীর ভাঙ্গিয়া পড়িতেছিল, কিন্তু শঙ্কায় মন তার সজাগ, সচেতন হইয়া রহিল । পুলক ফিরিয়া আসিল রাত্রি প্রায় একটার সময়। গলিতে রিক্সার আওয়াজ শুনিয়াই ধনেশ ও উমা নিচে নামিয়া সদর খুলিয়া দিয়াছিল। পুলক রিক্স হইতে নামিল, ভাড়াও মিটাইয়া দিল । সমস্ত শরীর শক্ত আর সোজা করিয়া বাড়ির মধ্যে ঢুকিবার সময় চৌকাটে পা বাধিয়া দাড়াম করিয়া পড়িয়া গেল। কঁাদিয়া উঠিবার উপক্ৰম করিয়া ধনেশের ধমকে উমা চুপ করিয়া গেল।