পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Str) মানিক গ্ৰন্থাবলী সর্বনাশ ! সঙ্গে কিছু ছোলাও আছে। সন্ন্যাসী তাই কিছু ছোলা চিবিয়ে এক ভঁাড় চা খেয়ে রাত্রেই রওনা দিয়েছে। পূর্ণিমার চাদকে মোটে ক্ষয় করেছে। চারিটি তিথি । এমন জবর জ্যোৎস্নায় নরম পুথে হেঁটে মনের মত কষ্ট পাওয়া অসম্ভব । শালা কি টানেই বাড়িটা টানছে তাকে, অনেকেই হয়তো যেখানে ভূত হয়ে গেছে মরে, সোনা বৌঠান শুদ্ধ। প্ৰথম গা সালাতিতে বরাবর একপাল কুকুর থাকত। পথিকে গা ভেদ করে যেতে গেলেই তাদের সমবেত চীৎকারে ঘুমন্ত রাত চিরকাল জীবন্ত হয়ে উঠেছে। কোনদিন কাউকে তারা কামড়ায়নি, তাড়াও করেনি, শুধু হল্লা করেছে প্ৰাণপণে । তবু ভয় একটু করেছে। পথিকের হাতের লাঠিটা বাগিয়ে ধরেছে শক্ত করে। সন্ন্যাসীর হাতে লাঠি ছিল না, গায়ে ঢুকবার আগে একটা ভাঙ্গা বাড়ির বেড়া থেকে একখণ্ড বাখ্যারি সে সংগ্রহ করে নিয়েছিল। কিন্তু থাপা থপি পা ফেলে গায়ের সীমানা সে পার হয়ে গেল, কুকুরের সে প্ৰচণ্ড কলরব তার কানে এল না । দু’চারটে খোঁকি শুধু নিজীবি ভাঙ্গা আওয়াজে একটু সাড়া জানিয়েই চুপ হয়ে ८१ ।। মানুষ ও কুকুরের একসঙ্গে মরবার ও গা ছেড়ে পালিয়ে যাবার এই অতি ঠাণ্ডা খবর অনুভব করতে গিয়ে সন্ন্যাসীর জরো অনুভূতি ছ্যাৎ ছ্যাৎ করে উঠল-গা পেরিয়ে যাবার পর। এখানে পথের দু’পাশে শুধু মাঠ আর জলা। সামলে নিতে থমকে দাড়িয়ে এলোমেলো নিশ্বাস নিতে নিতে সন্ন্যাসী চারিদিকে তাকায়, স্পষ্ট বুঝতে পারে চাঁদের আলোয় উজ্জ্বল এই নির্জন বিস্তৃতির মধ্যে মনটা তার ছোট হয়ে গেল। তারই আতঙ্কে মনটা কুঁচকে গেল, ভাজ হয়ে গেল। শালা, চোখেও যে ঝাপসা দেখছে ! মাথা ঘুরে পড়ে যাবার আগেই সন্ন্যাসী কায়দা করে বসে পড়ে পথে কনুই ঠেকিয়ে মাথাটা নামিয়ে দিল হাতের তালুতে । কতকাল সে পেট ভরে খায়নি, প্ৰাণপাত করে শুধু খেটেছে। মাঝে মাঝে এরকম হয় তার খানিক পরেই কেটে | । খানিক পরে উঠে দাড়িয়ে সন্ন্যাসী আবার চলতে শুরু করল । হঠাৎ ভয়াবহ বিস্ময়ের সঙ্গে মনে হল শরীর যেন তার হাল্কা হয়ে গেছে, তার কোন বোঝা নেই! চালের পুটলি কঁধে নেই, সেই পুটলির বাড়তি কাপড়টুকুতে বাধা ছোলাগুলিও সেই সঙ্গে গেছে। কোথায় পড়ল? কখন পড়ল? কুরু কুরু কুরু