পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিস্থিতি 8bምዓ করতে লাগল সন্ন্যাসীর পিঠের খানিকটা মেরুদণ্ড । তার হিসাব, তার কল্পনা, সব, ভোতা হয়ে গেছে। মাথা ঘুরে পড়তে গিয়ে যেখানে বসে পড়েছিল সেইখানেই যে পুটলি দু'টির থাকার সম্ভাবনা বেশি, এটুকু খেয়াল করে আশান্বিত হবার ক্ষমতাটুকুও তার নেই। একটা মৃতদেহকে ধরে দাড় করিয়ে হঁটিয়ে নিয়ে যাবার মত নিজের দেহটাকে সে উন্টে দিকে এগিয়ে নিয়ে চলল। একটু গিয়েই পুটলির পাশে বসে মস্ত একটা আটকানো নিশ্বাস ফেলে সে শুধু নিশ্চল হয়ে আবার খানিকক্ষণ বিশ্রাম করল । পলাশমতির কাছে পৌছে সন্ন্যাসীর মনে হল, সে যেন আবার আগের গা সালাতিতেই ঢুকতে যাচ্ছে। পথের ধারে সালাতির যে প্ৰথম ভাঙ্গা বেড়া থেকে আত্মরক্ষার জন্য বাখ্যারি সংগ্ৰহ করেছিল, পলাশমতিতে প্ৰবেশ পথের ধারেও তেমনি একটি ভাঙ্গা বাডি আছে, কেবল বেড়ার কিছুই অবশিষ্ট নেই। কানা বাঞ্ছার বাডি। দেখলেই টের পাওয়া যায় বাডিটা শূন্য, মানুষ নেই। 'दा ।' সাডা না পেয়ে অনুমানকে প্ৰত্যয় করে সন্ন্যাসী এগিয়ে গেল। দু’একটি দুঃস্থ কুকুরের তেমনি ক্ষীণ আওয়াজ কানে আসছে। কোন বাড়িতে মানুষ আছে কোন বাড়িতে নেই নির্ণয় করতে আর সে সময় নষ্ট করবে না । সোজা বাড়ি চলে যাবে- নিজের বাড়িতে কে বেঁচে আছে, কে মরে গেছে দেখতে । বামুন পাড়ার নতুন পুকুরের পাশ দিয়ে যাবার সময় মনে হল কে যেন জিজ্ঞেস করল, “কে ?” সন্ন্যাসী সাড়া দিল না । ঘোষালদের আমবাগান থেকে শুকনো পাতায় চারপেয়ে কোন কিছুর চলার মচ মচ শব্দের সঙ্গে তীব্র একটা পচা গন্ধ ভেসে এল। পরের পাড়ার তিনটি বাড়ি পেরিয়ে তাদের টিনের চালার তিনটি ঘরওয়ালা বাড়ি । আট ন’ বছর মেরামত হয়নি। তবে যা কিছু থাকবার কথা প্ৰায় সবই আছে, ভেঙ্গে পড়েনি এখনো । বেড়া নেই। পাশের ছোট কলাবাগান আর শাজী ক্ষেতের বেড়ার চিহ্ন লোপ পেয়েছে। সামনে লাউ কুমড়ার মাচা দুটি হয়েছে অদৃশ্য। দেখে একটু স্বন্তি বোধ করল সন্ন্যাসী। বেড়া আর মাচা নিশ্চয় উনানে পুড়েছে। উনানে আগুন জ্বলেছে তার বাড়িতে, রান্না হয়েছে। হয়তো সবাই বেঁচে আছে বাড়িতে, একজনও মরেনি। কোন মতে কুড়িয়ে পেতে একমুঠো