পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৫০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিস্থিতি (eV) খুচরো এগার আনার চাপ । কোমরের আঁচলের কোণেও বাধা আছে একটাকার চারটে নোট । জীবনে আর কখনো কোনো মেলায় খাদ্য এত টাকা পয়সা নিয়ে যায়নি, তাও আবার সব তার নিজের রোজগারের টাকা পয়সা। বাপভায়ের কাছে চেয়ে চিন্তে, একরকম ভিক্ষে করে কয়েক গণ্ডা পয়সা নিয়ে সে মেলায় যেত, আজি এসেছে নিজের কামানো পাঁচ টাকা এগার আনা নিয়ে ! টাকা থাকার মজাটা যেন খেয়ালও করেনি। খাচু এতদিন, আজ যেন তার প্রথম মনে পড়ে যে দত্তগিনীর কাছে তার দেড় দু’বছরের মাইনের অনেক টাকা জমা আছে, দু’এক টাকার বেশি কোনো মাসেই সে নেয়নি। সে কত টাকা হবে কে জানে! টাকার জোরে বুকের জোরে যেন বেড়ে যায় খাদুর আজ মেলায় এসে নিজের পয়সা যেমন খুশি খরচ করতে পারবে খেয়াল হওয়ায় । সেই সঙ্গে এতদিন পরে একটা ভয় চোকে খাদুর মনে । এতকালের মাইনের টাকাগুলি জমা রেখেছে দত্তগিনির কাছে, হিসেবও জানে না সে কত টাকা হবে, দত্তগিল্পী যদি তাকে ফাকি দেয়, যদি একেবারে নাই দেয় টাকা ? বোকার মত কাজ করেছে, খাদু ভাবে মাসে মাসে মাইনে চুকিয়ে নিয়ে নিজের কাছে টিনের তোরঙ্গে রাখেনি বলে আপসোস করে খাদু। হায় গো, টাকাগুলি যদি মারা যায় তার ! কি কিনবে ভাবতে ভাবতে সোনার একটা আংটি কিনে বসে খাদু বারো আনা দিয়ে । খাটি সোনার নয়। কিন্তু ঠিক যেন সোনা, কি সুন্দর যে মানিয়েছে তার বঁা হাতের সেজে আঙ্গুলে। বিয়েতে একটা আসল সোনার আংটি পেয়েছিল খাহু, বছর না ঘুরতে সে আংটি কেড়ে নিয়েছিল করাটা তার, ফিরে দেবে বলেছিল বটে। কিন্তু আরও যে বছরখানেক বেঁচেছিল তার মধ্যে দেয়নি। ও মিছে কথা, বেঁচে থাকলেও দিত না, খাদু জানে। তারপর কতকাল আংটি পরার সখটা খাহু চেপে রেখেছিল, এতদিনে মিটাল। কিন্তু না গো, মিটেও যেন মিটাল না, প্ৰথম বয়সের সাধ কি আর মেটে মাঝ ৰয়সে, নিজে নিজের সাধ মেটালে, কেউ আদর করে কিনে না দিলে । কজ্জাতেরা তাকায়, গায়ে গা ঘসে যায় ছলে কৌশলে, খানিক আগে থেকেই পিছু নিয়েছে ওই বাবুলাজা লোকটা। ফিনকিনে পাঞ্জাবীর নীচে গেৰিটা যেমন স্পষ্ট শুর মতলবণ্ড স্পষ্ট তেমনি। খাদ্ধ ওসব গায়ে মাখে না, রাগ করে না, বিচলিত হয় নী । মেলাতে এরকম হয়, কতকগুলি লোক এই করতেই আসে মেলায়, মেয়েলোকের গায়ে একটু গা ঠেকিয়ে মজা পেতে, পুরুষ হয়ে চোয়ের মত এইটুকু নিয়ে