পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৫৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিস্থিতি (R) কি করে বঁাচানো চলতে পারত কুজাকে - সকলকে । জেগে জেগে স্বপ্ন দেখা হলেও বড় প্রিয় ছিল পরিকল্পনাগুলি তার কাছে। তাই, বাড়ি তার ভাল আছে দেখে, বাডির সামনের শিউলি গাছটা আজও বাকিয়ে উঠেছে দেখে আর সেই তলায় সাবান-কাচা তঁতের কোড়া রঙীম শাড়ি পরা কুজাকে থমকে দাড়াতে দেখে ছিদাম থ’ বনে যায়! কলসী কঁাখে ঘাটেই কুজা যাচ্ছিল, আগে যেমন যেত। ছালা ছেড়া ন্যাকডা জড়ানো একটা লোককে বাড়ির বেড়ার সামনে দেখে ভয়ে থমকে দাড়িয়েছে। প্ৰথম কথা মনে জাগে ছিদামের : আজও কুজা বেলা শেষ করে ঘাটে যায় ? ঘাট অবশ্য লাগাও, তবু— চেহারা ফিরেছে। কাজার । আজ মেঘলা অবেলায় খাজা দেখাচ্ছে কুজাকে। এ বড় অদ্ভুত কাণ্ড, নয় কি ! বিয়ের সময়কার রোগ প্যাটিকা মেয়েট ছ’সাত বছর যদিন স্বামীর সঙ্গে ঘরকন্ন করল, একটা ছেলে আর মেয়ের মা হয়েও রইল যেন প্যাকাটি, স্বামীর দেড় বছরের অন্তর্ধানের সময়টাতে সে মরার বদলে পুড়ন্ত বাড়ন্ত যুবতী হয়ে গেছে! কুজা বেঁজে বলে, বাড়ন্ত সব, আরেক বাড়ি যাও । ছিদাম বলে, চিনলা না মোরে ? আমি যে ফির্য আলাম । কুজা দু’পা এগিয়ে যায়। —তুমি ফিরা আসছ ? কন থেইকা আইলা তুমি ? সে যেন ভূত দেখেছে। এই মাটির পৃথিবী না মৃত্যুর দেশ কোথা থেকে আজ সে এই ছায়াচ্ছন্ন পড়ন্ত বেলায় হঠাৎ তার সামনে এসে হাজির হয়েছে। এ বিষয়ে তার রীতিমত সংশয় । ত্ৰিয়মান ছিদাম বেড়া পেরিয়ে কাছে এগিয়ে আসে, উদাস কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করে, যামুগা ? ক্যান ? যাইবা ক্যান? দাওয়ায় কুজা ভাল পাটি বিছিয়ে দেয় ঘর থেকে এনে, বলে, বসবা এক দণ্ড ? জলডা নিয়া আৰম ? ঘরে এক পলা জল নাই, কলুকি CSS কুজা একরকম পালিয়েই যায় কলসীটা তুলে নিয়ে কিন্তু আদর করে পাটি পেতে বসিয়ে গেছে বলে মনটা বিগড়ে যায় না ছিদামের। ঘাট থেকে ফিরে আসবে কুজা, তাড়াতাড়িই ফিরে আসবে। ও শুধু একটু দম ফেলতে গেছে, সব কথা বিচার করে দেখতে গেছে। ঘরে এক ফোটা জল নেই বলে জল আনতে যাবার ছুতো করে । দম ফেলার দরকারটা, বিচার বিবেচনার প্রয়োজনটা জড়িয়ে আছে ওয়া বেঁচে থাকার, বাগানে ফুল ফোটাবান্ধ, রঙীন শাড়ি গায়ে জড়াবার, পরিপুষ্ট