পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

फ्रिख्ाशनेि @ ዓ বঁাডুষ্যে গম্ভীর হয়ে বলে, “উপায় কি বলো, জাত কি লোপ পেয়ে যাবে ? আমাদের গাই গরুর কথাই ধরে । এতগুলো গাই, ষাড় আছে কটা ? গাই নিয়ে সবাই ছোটে একটা দুটো ষাড়ের কাছে, উপায় কি!’ যুদ্ধ বেধেছে বাধুক ! যুদ্ধের জন্যই যারা এমন করে বংশবৃদ্ধি করে, যুদ্ধ করে তারা ধ্বংস হয়ে যাক ?” বিদেশে বিদেশীদের যুদ্ধ, মধুবনীর চাষীদের কি সম্পর্ক সে যুদ্ধের সঙ্গে ? জাপান যুদ্ধে নেমেছে? জাপানও তো বিদেশী। বিলিতী মাল আসে মধুবনীতে, জাপানী মাল আসে। বিলাতও যেমন বিদেশ, জাপানও তাই। বঞ্চিত নিম্পেষিত জীবন এদের কাছে স্বাভাবিক সঙ্গত ও অভ্যস্ত হয়ে এসেছে, সুদূরের বিদেশের যুদ্ধের চাপটা তারা অনুভব করে ধীরে সুস্থে। কোনমতে বেঁচে থাকার সামান্য প্ৰয়োজনগুলি এলোমেলো হয়ে থাকার চাপ । কোনদিকের চাপট বাড়ে ক্রমে ক্ৰমে কোনদিকের চাপ অকস্মাৎ বেড়ে গিয়ে তাদের দিশাহার করে দেয় । তেল নুন মশলার দোকানে আধলা ছিদামের বিক্ৰী বন্ধ হওয়ার মধ্যে তারা ব্যক্তিগত ভাবে টের পায় যুদ্ধের ধাক্কা । জিনিষের দর বাড়ে। কতগুলি জিনিষের দাম একেবারে হয়ে যায় চড়ক গাছ । কতগুলি দরকারী জিনিষ একেবারে অদৃশ্য হয়ে যায় বাজার থেকে। সারা মধুবনীতে বিলেতী ফুড কেনার সমস্যা চাষীদের মধ্যে এক রঘু ছাড়া আর কেউ বোধ করেনি, কিন্তু লাঙ্গলের ফােল, দা কাস্তে পেরেকের সমস্যায়। ভুগেছে অনেক চাষী। নিতাই কামারের হাপর বন্ধ নয়, কিন্তু হাপর চলেছে শুধু সারাইয়ের কাজে, কিছু তৈরী হবে না, লোহা নেই। বাজারের পুরানো লোহার কারবারী রামচরণ কদিন আগে হঠাৎ এসে ডবল দাম দিয়ে লোহার গুড়োটির পর্যন্ত কুড়িয়ে নিয়ে গেছে নিতাই এর দোকান থেকে । নিতাই কি জানত তখন এমন ব্যাপার হবে ? গরুর গাড়ীর একটা লোহার ডাণ্ডা। রামচরণ কিনে নিয়ে গিয়েছিল সাড়ে পাচটাকায়, আড়াই টাকা লাভ হয়েছিল নিতাই-এর। মিউনিসিপ্যালিটির গাড়ীটার জন্য সেই ডাণ্ডা হরেকৃষ্ণবাবু কিনেছেন তের টাকায়। সাড়ে সাতটাকা লোকসান নিতাই-এর ! লাজনতলার সোমবারের হাটে কাপড় কিনত চাষীরা, আট দশ আনা চড়া দেখে দু’তিন হাট তারা কেনা বন্ধ রেখেছিল। পরের সোমবার দ্যাখে কি হাটে কাপড় এসেছে মোটে দু’চারখানা । ইদুনাখার বরুল ত্যাতি কেঁদে বলল, “হায়রে ঝকমারি! একা বুনি দু’চারখানা তাতে কি ভাই সংসার চলে ? দশজনেরটা কিনে এনে বেচে আছি দু’চার গণ্ডা লাভ পেয়ে। শাল ছিনাত নন্দী টাকা দিয়ে সাপটে সব কিনে নিল ; ভাবলাম