পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চিহ্ন bምዕ: ঠিক ! ভাল লক্ষণগুলি তো চোখেই পড়ে না ।” “সে আমার দোষ নয় সীতা । খারাপ লক্ষণগুলিই চোখে পড়ে, ভালগুলি পড়ে না, তার সোজা মানে এই যে ভাল লক্ষণ বিশেষ নেই চোখে পড়বার মতো ।” “তুমি আজ এসো হেমন্ত ।” রাগে এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল হেমন্তের চিন্তা, জাল ধরে গিয়েছিল বুকে । কিন্তু সে অল্পক্ষণের জন্য। সীতা তাকে শুধু সহাই করে এসেছে চিরকাল, আজ তার সেই ধৈর্যের বাধ ভেঙে গেল, এটা বিশ্বাস করা কঠিন হেমন্তের পক্ষে। সীতা চায়ও না চোখ-কান বুজে সে তার মতে সায় দিক, তার কথা মেনে নিক। মতের বিরোধ তাদের আজকের নয়, অনেকবার তাদের কথাকাটাকাটিতে যে উত্তাপ সৃষ্টি হয়েছে তার তুলনায় আজকের তর্ক তাদের খুব ঠাণ্ডাই হয়েছে বলতে হবে। কেন তবে সে অসহ্যু হয়ে উঠল আজি সীতার কাছে ? এমন কোন সিদ্ধান্তে কি সীতা এসে পৌছেছে তার সম্বন্ধে যার পর তার সঙ্গে ধৈৰ্য ধরে কথা বলা আর সম্ভব হয় না ? বুদ্ধি দিয়ে কথাটা বোঝবার চেষ্টা করেছিল হেমন্ত, কিছুই বুঝে উঠতে পারেনি। তখন হাল ছেডে দিয়ে ভেবেছিল, আত জটিলতার মধ্যে যাবার তার দরকার কি ? মনটা হয়তো ভাল ছিল না। সীতার কোন কারণে। মেজাজটা হয়তো বিগডেই ছিল আগে থেকে । মন কি ঠিক থাকে মানুষের সব সময় । সীতার তীব্র বিরাগের রহস্য যেন একটু স্বচ্ছ হয়েছে এখন। দু’টাে-একটা ইঙ্গিত জুটেছে রহস্যটা আয়ত্ত করার। কতকগুলি বিষয়ে বড় বেশী সে গোড়া হয়ে পডেছিল সন্দেহ নেই। পৃথিবীটা সত্যই অনেক বদলে গেছে। কল্পনাতীত ঘটনা সত্য সত্যই আজ ঘটছে তারই চোখের সামনে ; দেশের মানুষের মধ্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে অবস্থার পরিবর্তনের সঙ্গে, ছেলেদের মধ্যেও । নতুন ভাব, নতুন চিন্তা, নতুন আদর্শ, নতুন উদ্দীপনা এসেছে—নতুন চেতনার লক্ষণ মোটেই আর অস্পষ্ট নয়। তারই শুধু এ সব চােখে পড়েনি। নিজের পুরানো ধারণা, পুরানো বিশ্বাসের স্তরেই সে ধরে রেখেছিল দেশকে চোখ-কান বুজে, ভেবেছিল তার মন এগোয়নি বলে দেশটাও পিছনে পড়ে আছে তারই খাতিরে ! এই গোড়ামি সহস্থ হয়নি। সীতার ৷ মতের আমিলকে সীতা গ্ৰহণ করতে পারে সহজ উদারতায়, অন্ধ গোড়ামি তার ধৈৰ্যে আঘাত করে । ঘোড়ার পায়ে পিষে ফেলবার চেষ্টার পর ঘোড়সওয়ারেরা তখন ফিরে গেছে।