পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চিহ্ন জর্জরিত করেছে, অসহ্যু যন্ত্রণা দিয়ে দিয়ে উন্মাদ করে দিয়েছে, এমন অন্ধ উৎকট প্ৰতিহিংসার বিকার কেন ? রসুল জানে না । মনের পর্দায় প্রশ্নটা তার স্থায়ীভাবে লেখা হয়ে আছে ক্ষোভের হরফে । প্রথম দিকে কোলাহল প্রচণ্ড হয়ে উঠেছিল সমবেত মানুষগুলির বিক্ষুব্ধ গর্জনে, এখন শান্ত হয়ে কলরবে দাড়িয়েছে। ছাত্রদের শৃংখলা ও শান্ত সংযত চালচলনের প্রভাব জনতার মধ্যেও সংক্রামিত হয়েছে, সংযম হারিয়ে তাদের ক্ষেপে ওঠবার সম্ভাবনা আর নেই। উত্তেজনা ও শৃঙ্খলার অভাবটা অদ্ভুত লাগে রসুলের, সে গভীর উল্লাস বোধ করে। ক্ৰোধে ক্ষোভে উত্তেজনায় ভরে গেছে নিশ্চয় বুকগুলি, কিন্তু মাথাগুলি ঠাণ্ডা আছে। রসুলের মনে হয়, সে যেন কত যুগ-যুগান্ত ধরে এমনি গরম হৃদয়ে ঠাণ্ডা মাথায় সমন্বয় প্রার্থনা করে আসছিল তার দেশের মানুষের কাছে, আজ এখানে দেখতে পাচ্ছে তার কামনা পূর্ণ হবার यूbनों । নিখুত ছাটের দামী সুন্দর পোষাক পরা সার্জেণ্টর দাড়িয়ে আছে দল বেঁধে, ওদের হৃদয়ে কি ভাব ও মনে কি চিন্তা ঢাকা পডে আছে বাইরের রাজকীয় নিশ্চিন্ততা ও অগ্রাহের সর্বাঙ্গীন উদ্ধত ভঙ্গিতে ? ওদেরই জন্য সৃষ্টি করা চাকরির গৌরব ও গর্বই বেচারীদের সম্বল, তারই মধ্যে ওরা সাত হাজার মাইল দূরের দ্বীপটির মাটির সঙ্গে আত্মীয়তা অনুভব করে জন্মভূমির মাটিতে হাঁটবার সময়। চিরবাগী গায়ের নুরুলের রাজহাঁস দু'টির কথা মনে পড়ে যায় রসুলের। পুতুলের মতো দাড়িয়ে আছে দেশী পুলিসেরা, নির্বক নিশ্চল। হুকুমজারি হয়নি এখনো চার্জ করবার। পাশের রাস্তার ভিড়ের শেষ প্ৰান্ত যতদূর সম্ভব ভেদ করে গাড়ি এগিয়ে এনে, গাড়ি থেকে নেমে ভিড় ঠেলে পুলিসের এলাকায় এসেছেন ব্যস্ত-সমস্ত এক ভদ্রলোক, অত্যন্ত উত্তেজিত বিব্রত আর অসহায় মনে হয় তঁাকে । এই শীতে গায়ে তঁর আদির পাঞ্জাবি, ফিকে মহুয়া রঙের দামী শাল অবশ্য আছে কঁাধে জড়ানো। ওঁর আবির্ভাবের জন্যই হয়তো স্থগিত রাখা হয়েছে লাঠি চার্জের হুকুম। হাত নেড়ে নেড়ে ভদ্রলোক কি বললেন সার্জেণ্টদের দলপতিকে বোঝা গেল না, তারপর অতি কষ্টে তিনি উঠে দাড়ালেন একটি পুলিসবাহী লরীর উপর। কোন নেতা নিশ্চয়, রসুল চেনে না । ‘উনি কে রে আবদুল ?”