পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ဓုကျိရ মমতা বিরক্ত হয়ে বলে, “চুপ কর বৌদি। তুমি এসব বুঝবে না।” মমতা কোনদিনই কনককে বিশেষ কেয়ার করে না, এসব রাধা-বাড়া ছেলেমানুষ-করা সঙ্কীর্ণমনা সাধারণ আত্মপরিতৃপ্ত মেয়েদের প্রতি তার একটা দারুণ অবজ্ঞার ভাব আছে-বিশেষতঃ যে সব মেয়ের কিছু করার সুযোগ ছিল। এরকম হবার জন্যেই যারা মানুষ হয়েছে। ঘরের মধ্যে, তাদের বরং সে ক্ষমা করতে পারে, সইতে পারে, কিন্তু নামকরা কংগ্রেস নেতা নিরঞ্জন বসুর মেয়ে হয়ে, পূর্ণেন্দুর স্ত্রী আর কৃষ্ণেন্দুর বৌদি হয়ে যে স্বেচ্ছায় সাগ্রহে ঘরের কোণে এই স্বার্থপর আত্মকেন্দ্ৰিক জীবন বেছে নিতে পারে, তাকে পছন্দ করা মমতার পক্ষে অসম্ভব। অথচ মাঝে মাঝে বেশ ভালই লাগে কনককে তার ! নিজের স্বামী-পুত্ৰ-দ্যাওরকে স্নেহ করার তার অদ্ভূত ক্ষমতা সময় সময় অসতর্ক মুহুর্তে মমতার অবহেলার বর্ম ভেদ করে মর্ম স্পর্শ করে তাকে একেবারে মুগ্ধ করে দেয়। পরীক্ষণে মনে মনে হেসে সে অবশ্য সামলে নেয় নিজেকে। এতে উচ্ছাস, এতো ভাবপ্রবণতা, নিছক দাসীর মনোবৃত্তি । কথা প্রসঙ্গে কৃষ্ণেন্দু একদিন একথা স্বীকার করেছিল, বলেছিল, “নিশ্চয়। তবে কি জানো, ওদের পক্ষে এই ভাল। এইরকম প্ৰকৃতি দাড়িয়ে গেছে, এভাবে স্নেহ করতে না পারলেই বিগড়ে যাবে, এমনি তীব্রতার সঙ্গে তখন সবাইকে হিংসা করবে-নিজেব লোককে শুধু নয়, পৃথিবীশুদ্ধ সবাইকে। কত মেয়ে ওরকম হয়ে যায়, তুমি নিজেও তো দেখেছি। রমেশ বসুর স্ত্রীকে মনে নেই? দিনরাত ঝগড়া করছে বাড়ীর আর পাড়ার লোকের সঙ্গে, স্বামীকে এক মুহুর্তের জন্য স্বস্তি দিচ্ছে না, ছেলেমেয়েরা সবসময় সন্ত্রস্ত হয়ে আছে, ছেলের বৌ দিনরাত কঁাদছে আর গলায় দড়ি দেবার কথা ভাবছে-ওর স্নেহ করার নেশা মিটলে এমন হত না । ওরকম হওয়ার চেয়ে স্নেহপাগল হওয়া কি ভাল নয় ? যার যেমন প্ৰকৃতি, উপায় কি বলে |’ মমতা বলেছিল, “নিজের প্রকৃতি বদলাতে পারে না মানুষ ? চেষ্টা করলে সংযত করতে পারে না নিজেকে ?” কৃষ্ণেন্দু বলেছিল, ‘পারে বৈকি, কিন্তু সে বড় কঠিন চেষ্টা । ভাবের আবেগে ফাসি যাওয়া বরং সহজ, ভাবপ্রবণতা সংযত করার চেয়ে । রীতিমত সাধনার ব্যাপার। নিজে নিজে একা একাজ কি সম্ভব সকলের পক্ষে ? একজন মহাপুরুষ বহুকাল একটানা চেষ্টা করলে তবে এসব মানুষের স্বভাব বদল করতে SS