পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্রন্থাবলী ততটা। নোংরামি যা আছে সেটা স্বাভাবিক, কারো ক্ষমতা নেই সেটা দূর করে, কয়লা ধুয়ে কালি সাফ করার মত। বাসনগুলি মেজে ঝকঝকে করেছে রস্তা, কিন্তু এই গর্ত আর ফাঁঠল ধরা মেঝেকে সে ধুয়ে মুছে কি করে মার্বেল পাথর করবে, কি করে তাড়াবে আনাচে কানাচে নিরাপদ আশ্রয়ের মধ্যে থেকে যে আসোলার দল শুড় নাড়ছে তাদের ! স্নানের আগে মমতা গেল পায়খানায়। ফিরে এল বিবৰ্ণ মৃতপ্ৰায় হয়ে । দশ বছর বয়সে প্রৌঢ় প্রাইভেট টিউটর ধরণীবাবু অত্যাচার করার পর যে অবস্থা হয়েছিল। তেমনি দেহ,মন নিয়ে । সাবান হাতে স্নান করতে গোল কলতলায়। পুরো পাঁচ মিনিট দাড়িয়ে রইল চুপ করে ! চােখ ! চারিদিকে চোখ ! দাতে দাত লাগিয়ে কঁাপিতে কঁাপিতে গায়ের জোরে সায়া ব্লাউজ খুলে ফেলল। গুমোটের গরমে সর্বাঙ্গ ঘেমে গেছে, কিন্তু জল ঢালতে ঠিক যেন জরতপ্ত গায়ের মত ছ্যাৎ ছ্যাৎ করে উঠল তার গা । ছারপোকার কামড়ে রাত্রে তার ঘুম হল না। তক্তাপোষ আর মনের ছারপোকার কামড়ে । সারাদিনে একজনকেও সে আপন মনে করতে পারে নি । নিজের টনটনে স্নায়ুগুলিকে স্বস্তি দিতে সে ঘরে ঘরে ঘুরেছে। সারাটা দুপুর। মেয়েপুরুষের আসর বসিয়ে সন্ধ্যার পর সকলের সঙ্গে গল্প করেছে, নিজে গান গেয়ে শুনিয়েছে। আর রামপালের গান শুনেছে, কথা কইবার চেষ্টা করেছে ভোতা অমাজিত ভাষায়, হাসবার চেষ্টা করেছে। অভদ্র রকমে। ঘরে ঘরে সবাই হয়ে থেকেছে ভীত, সন্ত্রস্ত, সন্দিগ্ধ ; আসরে সবাই হয়ে থেকেছে কাঠ। যদি বা দু’চার জন হোসেছে কখনো, সে হাসি হয়েছে সম্মানীয়া একজনের হাস্যকর পাগলামী দেখে ঝি-চাকর যেভাবে হাসে । আর লন্ঠনের আলোয় সে কি বিষন্ন হতাশ সন্ধ্যা-বিষন্নতার ঘনায়মান রাত্রি ! কোনমতেই মমতা শেষপৰ্যন্ত সেই গুরুভার গভীর নিরাশার ক্রমিক সঞ্চারকে ঠেকাতে পারে নি। ঝিমিয়ে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। শেষের দিকে । আরও কি ভয়ানক শ্বাসরোধ করা ফাদে সে পড়েছে দ্যাখো । হার মানা মানে দাড়িয়ে গেছে শুধু হীরেন। আর কৃষ্ণেন্দুর কাছে নয় এদের কাছেও হার মানা ! এদের আপনি না করে এখন পালিয়ে গেলে এরা তাকে টিটুকারি দেবে, , কোন মৰ্যাদাই আর থাকবে না। তার এদের কাছে। রাতদুপুরে কি অসহায় ষে SRr