পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দর্পণ মমতার মনে হল, এদের সঙ্গে তার ব্যবধান বেড়ে গেছে—অনেক দূরে চলে গেছে। এরা । ব্যবধান অবশ্য যা থাকবার তা ছিলই - মমতার কাছে সেটা ধরা পড়ছে মাত্র। কিন্তু সেজন্য বিব্রত বা বিচলিত হওয়ার বদলে সে যেন খুলীই হল ভেবে চিন্তে। একটা গুরুতর সত্য সে আবিষ্কার করেছে, কৃষ্ণেন্দুও হয় তো যার হদিস পায় নি। সে উৎসাহ বোধ করে। কোমর বেঁধে উঠে পড়ে কাজে লেগে যায়। বলে, “না । কলতলায় জল নিয়ে ঝগড়া চলবে না । বাগড়া করে লাভ কি বলো ? জলের পরিমাণ কি তাতে বাড়বে ? সবারি জল চাই-সবাই যাতে জল পায় সে ব্যবস্থা করতে হবে। এক বাড়ীতে মিলেমিশে শান্তিতে থাকতে হলে কি কে আগে এসেছে কে পরে এসেছে এই নিয়ে ঝগড়া করা চলে ? তুমি তো দু’কলসী নিয়েছ ক্ষান্ত পিসী, এবার রাণীর মাকে দু’কলসী নিতে দাও । গোপাল তুমি পুরুষ হয়ে ঝগড়া করতে এসেছি মেয়েদের সঙ্গে ? তোমাদের বেশী জল দরকার তা জানি । আমি আজ হিসেব করে নিয়ম বেঁধে দেব, কার পর কে নেবে, কতটা করে নেবে। দু’তিন দফায় জল নিতে হবে তোমাদের। একজন হাড়ি কলসী বালতি সব ভর্তি করবে। আর আরেকজনের জলেব জন্য রান্নাবান্না বন্ধ হয়ে থাকবে, সেটা তো ভাল নয়।’ গোপালের বৌ বলে, “ওতে কি টানাটানি কমবে দিদিমণি ? সবার কুলোয় না জলে । ক’বাক জল যদি আনিয়ে দ্যান মালীকে দিয়ে রাস্তার কাল থেকে—” “বেশ তো। সবাই মিলে চাঁদা তুলে—” “চাদা ? এর জন্যে আবার চাদ | ??? রাণীর মা তোমাজের হাসি হেসে বলে, “দুটো কি তিনটে টাকা তো নেবে মালী। ঘরে আপনার লাখ টাকা পচছে, দুটো তিনটে টাকার জন্যে চাঁদা তুলবেন কি বলছেন, মাগো মা হাসির কথা !? সুযোগ পেয়ে মমতা তাদের দশ কথা শুনিয়ে দেয় । ভাল ভাল কথা, খাটি উপদেশ। নিজেদের উপর নির্ভর না করে পরের ভরসায় থাকলে তাদের যে কোনদিন কিছু হবে না। এই বিষয়ে উপদেশ । ‘জল আনার ব্যবস্থা আমি করিয়ে দিচ্ছি। কিন্তু তোমরা নিজেরা মিলে মিশে ব্যবস্থাটা করে নিলেই আমি খুশি হতাম।” সঙ্গে সঙ্গে গুঞ্জন ওঠে চারিদিকে । ‘ও বাবা, কােজ নেই জলে মোদের, খুলী মনে না দিলে।” ‘তিনটে টাকার জন্য এত ’ SVS