পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী “এতকাল চলে নি মোদের ? মিলেমিশে চালাইনি মোরা ?” মমতা ক্ষুব্ধ হয়ে বলে, “তোমরা রাগ করছ, কেন ? কথা বুঝছি না কেন আমার ? তোমাদের কি এই একটা অভাব ? এটা মিটলেই সব দুঃখদুর্দশা শেষ হয়ে যাবে ? সবাই মিলে না করলে দুঃখ তোমাদের কোনদিন ঘুচিবে না। কিসে মিলবে তোমরা ? এই সব অভাবের প্রতিকার চেয়ে কাজ করার তাগিদেই মিল হবে তোমাদের। প্ৰথমে এ বাড়ীর সবাই মিলবে, তারপর পাড়ার সবাই, তারপর দেশ জুড়ে। তখন কে ঠেকাবে তোমাদের ? এই কথাটাই বোঝাতে চাচ্ছি। তোমাদের । আবোল তাবোল কথা মনে আসছে কেন তোমাদের ? ' “মনটাই যে মোদের আবোল তাবোল গো দিদিমণি ৷৷’’ বলে লক্ষ্মী হাসে । পরদিন ভোরে উঠে মমতা খালাধারে একটু বেড়াতে গেছে, ফিরে এসে দ্যাখে, কলতলায় কুরুক্ষেত্ৰ কাণ্ড । তার তালিকা অনুসারে প্রথম দফায় প্রয়োজন মত প্ৰত্যেক পরিবারের এক থেকে তিন বালতি বা কলসী জল পাবার কথা । গোপালের বৌ বিরাট একটি বালতি এনেছে কোথা থেকে, রাণীর মা এনেছে তার চাল রাখার মাটির জালাটি । এই হল ঝগড়ার একটা কারণ । আরেকটি কারণ হয়েছে শিউশরণ । বিতরণের প্রথাটা কাল মেনে নিলেও আজ সে গোলমাল সুরু করে দিয়েছে। লোক কম হলেই জল কম লাগবে কেন তার মানে সে বোঝে না । লোক কম বলে। ঘরের ভাড়া কি কম নেওয়া হয় তার কাছে ? গোড়ায় বেশী তেজ দেখায় নি। শিউশরণ, জগদম্ব আর পুষ্প তার পক্ষ নেওয়ার পর সে একেবারে মারমুখো হয়ে উঠেছে। দু’বাক জল দিয়েই মালী চলে গেছে, আর সে জল দিতে পারবে না। চার টিন জলের মধ্যে রম্ভ আর দুর্গ নিয়েছিল দু’টিন, গোপালের বৌ নিয়েছিল দেড় টিন । অন্যেরা আড় চোখে দেখেছিল চেয়ে চেয়ে । আধ টিন জল নিয়ে মালী যেই গেছে। বিন্দের ঘরের দিকে, সে কি রাগ আর গালাগালি বিন্দের । টিন উল্টে দিয়ে ফোস ফোস করে সে বলেছে, “যা যা ওদের দিগে যা । দিদিমণির পেয়ারের লোককে দিগে যা। ওখানে টিন টিন জল দিয়ে দু’ঘটি জল নিয়ে কুলকুচো করাতে এসেছে ব্যাটাচ্ছেলে ? ফের জল দিতে এসে অপমান করবি তো মাথা ফাটিয়ে দেব তোরা ।” বিবরণ শুনে কথা সরে না মমতার মুখে, সে থ” বনে যায়। মনে মনে বলে, এরা শিশু নাসয়তান ? আঁ্যা, শিশু না। সয়তান এরা ? »V9R