পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ဇုကျိရ মমতা বলে, ‘রোজ সন্ধ্যার পর আমি তোমাদের এক ঘণ্টা করে বই পড়ে শোনাব । সকলে হাজির থাকবে কিন্তু ।” প্রথম দিন প্ৰায় সকলেই হাজির থাকে। বেশ উৎসাহ দেখা যায় সকলের। রামপালের কীর্তন শোনার মত উৎসুক মনে হয় সকলকে। পরদিন আসর প্রায় খালি পড়ে থাকে, রম্ভ দুৰ্গা পরেশ নরেশ আর লক্ষ্মী ছাড়া কেউ আসে না মমতার মূল্যবান পড়া শুনতে। ডাকতে গেলে বলে, “আসছি, দিদিমণি আসছি।” কিন্তু আসে না । মমতা বলে, “তোমরা এত বোকা কেন ? এক বাড়ীতে এতগুলি উনুন জ্বলে, কত পয়সা নষ্ট হয়। এতগুলি হাড়িতে ভাত সেদ্ধ হয়, মিছিমিছি কত বেশী খাটুনি। সবাই মিলে একসাথে রান্নার ব্যবস্থা করলে কত পয়সা আর পরিশ্রম বঁচে বল দিকি ? আচমকা এটা করা যাবে না জানি। কটা দিন যাক, আমি সব ঠিক করে দেব। এ ব্যবস্থা করে তবে আমি নড়ব এখান থেকে।” শুনে আশঙ্কায় সকলের মুখ লম্বা হয়ে যায়। এমনি কত কথাই যে বলে মমতা, কত সংশোধন ও পরিবর্তন আনবার চেষ্টাই সে যে করে । সমষ্টিগত জীবনেই শুধু নয়, ব্যক্তিগত জীবনেও। সর্বদা সে যেন ওৎ পেতে থাকে কখন কে কি অন্যায় করেছে, কার কি ভুল হচ্ছে। কদৰ্যতা আর বীভৎসতা যত অসহ্যু হয়ে উঠছে তার কাছে, তত সে মরিয়া হয়ে মেতে যাচ্ছে এই সব হতভাগা হতভাগিনীদের জীবনের আবর্জনা সাফ করার কাজে। এদের কিছু করলে তবে তো তার মুক্তি, তবে তো সে এখান থেকে চলে গিয়েও বলতে পারবে, দেখলে তো পালিয়ে আসিনি, আমি এই করেছি। আর ওই করেছি। ওদের জন্য। তার জন্য তাই এখানে কেউ সাধ মিটিয়ে অকথ্য ভাষা উচ্চারণ করতে পারে না, প্ৰাণ কেঁদে ওঠে সকলের সেই অনুচ্চারিত শব্দ গ্যাসে। ছেলে মেয়েকে মারতে পারে না, গা চুলকোতে পারে না, পিক ফেলতে পারে না, খোস প্যাচড়ায় ওষুধ না মাখিয়ে রেহাই পায় না ; রান্নায় ঝালমশলার স্বাদ পায় না, মুখরোচক অখাদ্য খাওয়া হয় না, নেশা করা যায় না, আরও কত কি । তাছাড়া, সবাই টের পেয়েছে এতটুকু উপকার পাবার ভরসা তার কাছে নেই। একে একে কয়েকজন নানাভাবে দুঃখ ও প্রয়োজন জানিয়ে টাকা চেয়ে গেছে তার কাছে। টাকা দিয়ে কারো উপকার করতে মমতা অস্বীকার У О9