পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী ব্যাপারে উৎসাহী একজন নাম করা ধনী হিন্দু নেতা যে লোকনাথের সঙ্গে দেখা করে গিয়েছিলেন, কৃষ্ণেন্দু তা জানত না । 甲 ভেবে চিন্তে সে কারখানার সব মজুরকে জড়ো করে হীরেনকে সঙ্গে নিয়ে যায় । হীরেন যায় অনিচ্ছার সঙ্গে কিন্তু বিনা প্ৰতিবাদে । প্ৰতিবাদ করে না, কিন্তু আপশোষ জানায়। নিশ্বাস ফেলে বলে, “ঘরে বাইরে এত অশান্তি আমার সয় না কেষ্ট ।” i ‘অশান্তিটা কিসের ?’ কৃষ্ণেন্দু শুধোয়। "এই ঘরে মমতাকে নিয়ে, বাইরে তোকে নিয়ে।” বলে সে একটু হাসবার চেষ্টা করে। ভীরু অপরাধীর মত কেমন এক ধরনের হাসি। তার জীবনে অশান্তি কথাটা যেন অন্যায়, তারই দোষ । এ ভাবটা হীরেনের দিন দিন বাড়ছিল। মমতা আর কৃষ্ণেন্দুর সঙ্গে কথা বলার সময় নিজেকে যতদূর সম্ভব লোপ করে দেয়—তার নিজস্ব পছন্দ-অপছন্দ ভাল-লগা ভাল নালাগার কথা মুখে এলে উচ্চারণ করেই গিলে ফেলে। ভেতরটা তার পুড়ছে। ঘুটের মত ধীরে ধীরে গোপনে। এটাও সে মানতে চায় না—জালাটা পৰ্যন্ত । সে কি ছোট লোক, অমাজিত, অসভ্য, স্বার্থপর যে আরিফ জেলে আছে, মমতা শান্ত হয়ে ফিরে এসে সন্ধি করেছে, তবু সে ঈর্ষায় জলবে, সর্বদা মনে হবে মমতা তাকে ঠকিয়েছে, ঠিকাচ্ছে, ঠিকাবে। যদি সে ভাবতে পারত যে মেয়ে জাতটাই এরকম। এটা ভাবতে গেলেই দিগম্বরীর কথা মনে ভেসে আসে —গেয়ে অশিক্ষিতা দিগম্বরী, স্বামী ছাড়া যার জগতে দ্বিতীয় পুরুষ নেই, সেবা। আর শ্রদ্ধা। যার স্বভাব। কৃষ্ণেন্দু হয়তো তাকে তুচ্ছ অনাবশ্যক মনে করে এ সন্দেহের জালাটা যখন বেড়ে যায়, নিজেকে বড় এক মনে হয়। হীরেনের, গভীর বিষাদ ঘনিয়ে আসে । সন্দেহ সত্য হয়ে দাড়াবার ভয়ে সে কৃষ্ণেন্দুর ওপরে বন্ধুত্বের জোর খাটায় না, নিবিরোধ ব্যবহারের চেষ্টা করে । তাই, কৃষ্ণেন্দুকে চটাবে না বলে হীরেন মজুরদের সভায় গেল। দু’চার জন ছাড়া লোকনাথের কারখানার সকলে প্ৰায় একসময়েই মিস্ত্রীঘরে এসে জড়ো হল। কারখানা থেকে তারা সোজা। এখানে এসেছে। কৃষ্ণেন্দু তাদের জন্য S (8