পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী ‘দিনভর কাঠ চিরি মেজবাবু।” ‘আর কেউ চেরে না ? তারা তো তোমার মত নিঝুম মেরে যায় না ? এসব বাজে কথা। রম্ভার আশঙ্কা বাড়তে থাকে। কৃষ্ণেন্দুকে সে জানে। যত গুরুতর বিষয় হয়, কথা আরম্ভ করতে তার ব্যস্ততা দেখা যায় তত কম, তুচ্ছ কথা নিয়ে ঘাটাঘাটি করে তত বেশী। ভেতরে সে যে খুব উদাসীন হয়ে থাকে। তা নয়, বাইরে এই ভাব দেখায়। অন্যদিন হয়তো তার এই খেয়ালকে রম্ভ। প্রশ্ৰয় দিত, আজ সে আর সবুর করতে পারল না। “খবর পেয়েছেন কেষ্টবাবু?” “খবর ভাল নয় রম্ভা ।” শুনে মুখ পাংশু হয়ে যায় রম্ভার। ‘জানি বাবাকে জেলে দিবে, ছাড়বে নি ।” 'জেল নয় রম্ভ, তোমার বাবার জেল হলে তো বলতাম, খবর ভাল। তোমার বাবা, কি জানি রম্ভ,-” কৃষ্ণেন্দুকে একবার টোক গিলতে হয়,-“বেঁচে নেই।” রম্ভার বাবা ভাল আছে। এই খবরটা যেমন তাচ্ছিল্যভাবে জানানো চলে তার বাবার অপমৃত্যুর সংবাদটাও ঠিক তেমনি ভাবে জানিয়ে দেবে ভেবেছিল, রম্ভ। যাতে বুঝতে পারে যে কেবল ছোটখাট ব্যাপারে নয়, মৃত্যুর মত ভয়ানক ব্যাপারেও ভাবপ্রবণতা তার কাছে প্রশ্ৰয় পায় না, সে পাথরের মত কঠিন। বলার সময় দ্বিধা বোধ করে, রাস্তার বাবাকে খুন করে ফেলা হয়েছে বলতে চেয়ে শুধু সে বেঁচে নেই বলে, নিজের মুখের চেহারা বদলে গেছে টের পেয়ে, কৃষ্ণেন্দু অনেকদিন পরে নিজের কাছে গ্লানিকার লজ্জা বোধ করল । নিজের তার ভাবপ্ৰবণতা নেই, নিজের সম্বন্ধে এই ধারণা যে তার ভাবপ্রবণতা থেকেই জন্ম নিয়েছে, এটা আর কোন মতেই অস্বীকার করা গেল না । বরং রামপালের অবিচলিত, সম্পূর্ণ না হােক প্রায় অবিচলিত, ভাব দেখে সে মনে মনে একটু ঈর্ষাই যেন বােধ করতে লাগিল । কয়েক মুহূর্ত স্তম্ভিত হয়ে থেকে ডুকরে কেঁদে উঠল ।রম্ভ। এ আশঙ্কাও তার মনে মনে ছিল, তাই বাপকে যে তার মেরে ফেলা হয়েছে, স্বাভাবিক মরণ তার ঘটেনি, এটুকু তাকে আর বলে দেবার দরকার হল না। কৃষ্ণেন্দু কি কি বলতে যাচ্ছিল, হীরেন বাধা দিয়ে বলল, “চুপ । কঁদিতে দে।” রস্তা শুনতে পেয়ে কান্নার মধ্যেই বলল, “এট্ট, কেঁদে নি—এট্টখানি কেঁদে নি।” YV8