পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ဓုါရ၊ চাউনি সাপের মত—মন্ত্ৰমুগ্ধ সাপের মত। স্ত্রীলোকের পাশে বসবার সুযোগ রম্ভ পেয়েছে কিন্তু এপাশে তার গোফওয়ালা যোয়ান মন্দ পুরুষ। বিব্রত হয়ে পাশের মানুষকে ঠেলা দিয়ে লোকটি তার আর রম্ভার মধ্যে ব্যবধান বাড়াবার চেষ্টা করেছে বটে, একটু কান্ত হয়ে রম্ভার দিকে ঘাড় ফিরিয়ে বসেছে, তবু গায়ে গায়ে ছোয়াছুয়ি হয়ে আছে খানিকটা । এত করে বলে রামপাল, মেয়েদের গাড়ীতে রম্ভ কিছুতে যাবে না। কি যে মতিগতি ওর কে জানে। মনে মনে হয়তো সে এইসব চায়, ভিড়ের চাপ, অজানা পুরুষের বজ্জাতি, লোভাতুর দৃষ্টিপাত। মেয়েমানুষকে বিশ্বাস নেই! ঘন ঘন রামপাল তার মুখের দিকে তাকায় । কিছু নেই রাস্তার মুখে । গভীর বিষাদ ছাড়া আর কিছুর হদিস মেলে না । কে ছোয় আর কে চায় যেন গ্রাহাই নেই তার, ওসবে কিছু যেন আসে যায় না, মানুষের এই সব অপব্যবহার যেন উচিত অনুচিত বিবেচনার পর্যায়েই পড়ে না। এসব কৃষ্ণেন্দু ওকে শিখিয়েছে। অন্দর বাহির একাকার হয়ে যাওয়া ভাল, স্ত্রীলোকের দিকে পুরুষের তােকানো খাবারের দিকে মানুষের তাকানোর মতই স্বাভাবিক, খাদ্যে ক্ষুধাতুর, নারীতে কামাতুর। মেয়েরা পুরুষের সঙ্গে সমানভাবে এগোবে, ধাক্কা খেলে ধাক্কা দেবে, মাথা উচু করে চোখ তুলে তাকাবে। কৃষ্ণেন্দুর কাছে এই সব কথা শুনে মাথাটা রম্ভার বিগড়ে গেছে। ওই শিক্ষা সে কাজে লাগাচ্ছে মাত্র । আর কিছু নয় । অপরাহ্নে তারা ট্রেণ থেকে নামল। ষ্টেশন থেকে ঝুমুরিয়া প্ৰায় দু’ক্রোশ পথ, গরুর গাড়ীতে যেতে হয়। পৌছুতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে। গাড়ী চলতে শুরু করলে রম্ভার মনে হল গাড়োয়ান তার চেনা । 'ঝুমুরিয়া ঘর বটে না ? ‘নাইকি। মোর ঘর পাচনিখে। তুমাকে চিনি তালেও মেয়্যা।” দিব্য বুগাড়োয়ানের কাছে ঝুমুরিয়ার খবর পাওয়া গেল। অন্য সব কৃষ্ণেন্দুর কাছে শোনা পুরাণে খবর, নতুন খবর শুধু এই যে ঝুমুরিয়ায় এখন কোন গোলমাল নেই। হাঙ্গামার দিন পুলিশ কয়েক জনকে গ্রেপ্তার করেছিল, দু’দিন পরে আরও তিনজনকে ধরে নিয়ে গেছে। না, রম্ভার ভাই তারা নয়, রম্ভার ভায়েরা তিনজনেই সুস্থ শরীরে কাজকর্ম করছে। গা এখন শান্ত, সকলে শিষ্ট ভালমানুষ হয়ে আছে। SS