পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী চেকার টিকেট চায়, নরেশ একদৃষ্টি কৃষ্ণেন্দুর মুখের দিকে চেয়ে থাকে। এতক্ষণে সে কৃষ্ণেন্দুর উদ্দেশ্য বুঝতে পেরেছে। দুচোখে তার তাই ভৎসনা ও অনুযোগের যেন সীমা নেই। তার এই নিঃশব্দ অভিযোগের ঔদ্ধত্য এত বেশী স্পষ্ট ও অভিনব যে কৃষ্ণেন্দু মুদু বিস্ময়ের সঙ্গে একটু অস্বস্তিও বোধ করতে থাকে। “বেশ লোক আপনি !” কৃষ্ণেন্দুকে এই কঠোর মন্তব্য শুনিয়ে নরেশ ধ্যা করে তার সার্টের পকেট থেকে এইটুকু একটি চামড়ার ব্যাগ বার করল এবং তার ভেতর থেকে অনেক ভজে ছোট করা আস্ত একটি পাচ টাকার নোট বার করে চেকারকে শুধোল, “চেঞ্জ হবে মশাই ?” সেই থেকে কি যে হল নরেশের, সব উৎসাহ উদ্দীপনা নিভে গিয়ে মনমাব হয়ে চুপচাপ বসে রইল। মাঝে মাঝে ক্ষণেকের জন্য কৃষ্ণেন্দুর দিকে তাকায় আর মুখ ফিরিয়ে নেয়। ছোট স্টেশনে একদল যাত্রী নেমে যেতে জানালার ধারে গিয়ে মাথাটা বাইরে গলিয়ে বহুক্ষণ একভাবে বসে রইল। হীরেন বাড়ী থেকে দশ বার জনের খাবার সঙ্গে এনেছিল, পথে উপোস করে মারা যাওয়ার আতঙ্কটা তার অতিশয় প্রবল। খাবারের ভাগ নিয়ে নরেশ আনমনে ভেঙ্গে ভেঙ্গে মুখে পুরতে লাগল। খিদেও যেন তার পায় নি। কি যে খাপছাড়া মনের গতি এসব পাগলাটে ছেলের ! মেরে রক্তপাত করে দেওয়ার পর দেখা হতে যে ভক্তি-গদগদ চিত্তে পায়ে হাত দিয়ে প্ৰণাম কবে বসেছিল, সামান্য একটু শিক্ষা দেবার চেষ্টা করায় আজ সে অভিমানে আত্মহারা হয়ে গেছে। কিন্তু অভিমান যদি করে থাকে অভিমানের কথাই কিছু বলুক, অনুযোগ দিক। কৃষ্ণেন্দু ধৈর্য হারিয়ে ফেলল। ‘টাকা কোথায় পেলি ?” ਰੇ করেছি ক্রুদ্ধ বিস্ময়ে কৃষ্ণেন্দুর মুখে কথা সরল না। ‘পরের স্টেশনে পুলিশ ডাকবেন না ?” এ তো অভিমান জানানো নয়, রীতিমত গায়ের ঝাল। ঝাড়া । নরেশ যে তার মুখের ওপর ওভাবে কথা বলতে পারে কৃষ্ণেন্দুর দুঃস্বপ্নেও তা সম্ভব হতে পারত কি না সন্দেহ । ছেলেটার কথার ঝাঝে হীরেনও থ’ বনে রইল। থেমে থেমে মন্থর গতিতে প্যাসেঞ্জার গাড়ী চলেছে। লোকাল প্যাসেঞ্জাররা নেমে গিয়ে እ ዓbሙ