পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

# ဂေါ့ရ একটু জায়গা হয়েছিল গাড়ীতে, গুটিমুটি হয়ে কোনরকমে শোয়া চলে। শোয়ার আগে কৃষ্ণেন্দু হঠাৎ আশ্চর্যরকম মােলায়েম গলায় বলল, “কাজটা একটু অন্যায় হয়ে গেছে। নরেশ । অত ভেবে দেখি নি।” নরেশের কাছে এইভাবে একরকম ক্ষমা চেয়ে ক্লষ্ণেন্দু তাডাতাড়ি শুয়ে পড়ে চোখ বুজল। ঘণ্টা দুই পাবে একবার ঘুম ভেঙ্গে দ্যাখে, নরেশ ওপাশেব বেঞ্চে গিয়ে শুয়েছে। কৃষ্ণেন্দুর মনে হয়, ছেলেটা তাকে জন্মের মত ত্যাগ করেছে, এ জীবনে কখনো সে আর তার মন পাবে না। সে গভীর বিষাদ অনুভব করে, সেই সঙ্গে অপবাধ করার একটা কষ্টকর অনুভূতি। ভগবানের মত ভক্তকে কষ্ট দেবার স্বভাবটি সে কেমন চমৎকার আয়ত্ত করেছে ! কত অন্যায়ের পাশ কাটিয়ে চলে, তাকে যে মানে না তার ক্রটি বিচূতি সংশোধনের চেষ্টা কখনো করে না, শুধু যে অনুগত তার ভাল করাব উগ্র চেষ্টায় চটকে চটকে সম্পর্কট তিতে করে দেয়। কত সে সাবধানী আর হিসেবী ! যেখানে অধিকাব আছে জানে, যেখানে ধরে মাবলেও প্ৰতিবাদ আসবে না জানে, সেইখানে দেখায় বাহাদুৰী। শুধু কথা বলে যদি কাজ হয় তাতে তার মন ওঠে না, জমকালো প্রক্রিয়ার প্রয়োজন হয় । সকালে দেখা গেল, কৃষ্ণেদুর আশঙ্কাটাই ঠিক, ক্ষমা চেয়ে নবেশের মন ভেজানো যায় নি। কাছে থেকেও সে যেন এক যোজন দূরে সবে গিয়েছে। ঝাঝালো কথা সে আর বলল না, অবিশ্বাস্য গাম্ভীর্যের সঙ্গে সমালোচকের দৃষ্টিতে কৃষ্ণেন্দুকে থেকে থেকে নিরীক্ষণও করল না। কথাবার্তা চালচলন তার প্ৰায় স্বাভাবিক হয়ে এল। তবু বেশ বোঝা গেল। কৃষ্ণেন্দুর বিরুদ্ধে মন তার ক্ষুব্ধ হয়ে আছে। কৃষ্ণেন্দুর সঙ্গে তার অতিরিক্ত ভদ্র ও সংযত ব্যবহারে পদে পদে তার প্রমাণ পাওয়া যেতে লাগিল । কৃষ্ণেন্দুর একটি হাসির কথায় হীরেন হেসে আকুল হয়ে গেল, নবেশের মুখের একটি রেখাও বাকল না। তখন আর কোন ভরসাই রইল না যে কৃষ্ণেন্দুকে সে আর কোনদিন ভক্তি করবে। সারাটা দিন সময় আছে ভেবে শশাঙ্ক কৃষ্ণেন্দুদের অভ্যর্থনার কোন আয়োজনই করে নি। আয়োজন আর কি, দাড়িটা কামিয়ে ফস একখানা কাপড় পরে নিজে একটু ফিটফাট হয়ে থাকত, বাগান ও সদরটা একটু সাফ করিয়ে রাখত। S) ዓኛS