পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী দিগম্বরী কঁাদ কঁদ হয়ে বলল, ‘ভেতরের ঘরের দরজা বন্ধ করে ছিলাম, শুনতে পাইনি। সর্বনাশ হয়ে গেছে ঠাকুরপো, কেষ্ট ঠাকুরপোকে ধরে নিয়ে গেছে।’ সন্ধ্যার একটু পরেই পুলিশ এসেছিল। কৃষ্ণেন্দুর সু্যটকেশ খুলে, বিছানাপত্ৰ ঘেটে, এদিক ওদিক একটু খোঁজাখুজি করে তাকে নিয়ে চলে গেছে। যাবার সময় নাকি মোহনকেও ধরে নিয়ে গেছে। “কি সর্বনাশ হল ঠাকুরপো।” “এ সর্বনাশ তো হতেই বৌঠান। এ ববং কম সর্বনাশ হল । কিন্তু পুলিশ খবর পেল কি করে ? ‘মোহন। একটা দল করেছে না, পুলিশ ওকে নাকি ধরব ধরব করছিল।” “কিন্তু কৃষ্ণেন্দু ? ওকে ধরল। কেন ? ‘তাতো জানি না ঠাকুরপো ।” ক্লষ্ণেন্দুকে আগেও দু’বার পুলিশে ধরেছে, কিছুদিন করে জেলও খাটিয়েছে। এত রাত্রে তার ধরা পড়ার ব্যাপার নিয়ে দাড়িয়ে দাড়িয়ে আলোচনা করে লাভ নেই। হীরেন। দরজা বন্ধ করতে গেল । দিগম্বরী ভয়ে ভয়ে বলল, “ঠাকুরপো, এ বাড়ীতে আপনি কেমন কবে থাকবেন ?” ‘কেন ? “আমি যে একলাটি আছি। ঠাকুরপো ? পঞ্চর মাকে আজ রাতে আমার কাছে শুতে বলেছিলাম, সে আসেনি। পুলিশের হাঙ্গামায় ভয় পেয়েছে বোধ হয়।” “আমি কি তবে এত রাত্রে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াব ? “একটু যদি সকাল সকাল ফিরতেন। ঠাকুরপো।” “সে কথা ভেবে তো এখন লাভ নেই।” ‘লোকে যে নিন্দে করবে ঠাকুরপো, যা তা বলবে।” হীরেন চটে বলল, “একটা মাদুর টাদুর দিন, আমি ওই গাছতলায় ঘুমোইগে।” দিগম্বরী সঙ্গে সঙ্গে বলল, “রাগ করলেন ঠাকুরপো ? আপনাকে কখনো গাছতলায় ঘুমোতে দিতে পারি! দিন, দরজাটা বন্ধ করে দিন। লোকে দুকথা বলে তো বলবে। আমরা তো বেশীদিন থাকাছি না। এখানে, দু’দিন বাদেই কলকাতা চলে যাব।” r R R O