পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী এাটে দিল না, এত সম্মান তার, এত খাতির ! হাত ধরে সে তাকে টানতে পারে। এই ভয়কে চাপা দিয়েও তাকে অখুশী না করার প্রয়োজনটা এত বড় দিগম্বরীর কাছে । তবে, এও হতে পারে যে ভয় হয় তো সে বেশী পায় নি। তাকে হয়। তো সে বিশ্বাস করে । “কি ঠাকুরপো ? কি বলছেন ?? ‘বসুন না একটু ? একলা থাকতে ভাল লাগছে না।” • ‘বাসব “একটু বসুন। কথাবার্তা বলি।” ‘অনেক রাত হয়ে গেছে। এখন ঘুমোইগে। আপনিও ঘুমিয়ে পড়ুন ঠাকুরপো ।” হীরেন জোর দিয়ে বলল, “পাচ মিনিট বসুন ।” দিগম্বরী ধীরে ধীরে গিয়ে কৃষ্ণেন্দুর এলোমেলো বিছানায় বসল। মুখের ভাব তার ক্ষণে ক্ষণে বদলে যাচ্ছে। বারবার নড়ে চড়ে সোজা হয়ে বসছে, তুলে তুলে নামিয়ে নিচ্ছে মুখ । হীরেনের মনে পড়ল, বোক এলে সে যাদের ঘরে মদ খেতে যায়, তারা এরকম করে না । তবে দিগম্বরী তাদের মত নয়, দিগম্বরীর অভ্যাস নেই। শশাঙ্ক ছাড়া দিগম্বরী কোন পুরুষকে জানে না, চেনে না, তার জগতে শশাঙ্ক ছাড়া কেউ নেই। তাই সে এরকম চঞ্চল হয়ে উঠেছে, একটু কঁপিছে। তবু তার ডাকে দিগম্বরী ঘরে, এসে বসেছে। শশাঙ্ককে সে চাকরি দেবে বলে। মাসে মাসে শশাঙ্কের মাইনের টাকাটা সে ভোগ করবে বলে,-“অবশ্য শশাঙ্কের সঙ্গে ভোগ করবে বলে । এখনো কি তার উপর বিশ্বাস আছে দিগম্বরীর ? এখনো সে কি আশা করছে, সত্যি সত্যি সে তাকে কথা বলবার জন্য ঘরে ডেকে বসিয়েছে ? আরেকটু এগোনো যাক। আরও স্পষ্ট, আরও নিভুল মীমাংসা হয়ে যাক । তারপর এ যন্ত্রণা থেকে সে ও বেচারীকে মুক্তি দেবে। আর পীড়ন করবে না। “অত দূরে বসলেন কেন ? এখানে এসে বসুন।” দিগম্বরী সাড়াও দিল না, উঠবার চেষ্টাও করল না । হীরেন একটা সিগারেট ধরাল। মদের বোতলের কথা তার মনেও ছিল না । সিগারেট ধরাতে গিয়ে এতক্ষণে সে টের পেল তার হাতও থর থর করে কঁপিছে। RRR