পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহরবাসের ইতিকথা গ্রামের লোকের প্রশ্ন আর উপদেশ বর্ষণে মনোমোহন একেবারে অতিষ্ঠ হইয়া छेटिल । কলিকাতা গিয়া বাস করার উদ্দেশ্যটা সকলকে সে ভাল করিয়া বুঝাইয়া দিতে পারে না, নিজের কাছেই উদ্দেশ্যটা স্পষ্ট নয়। সহরের কলের জল, বৈদ্যুতিক বাতি, ট্রাম বাস, সিনেমা থিয়েটার, সমারোহ, সভ্যতা এসব কি তাকে টানিতেছে ? গ্রামের একঘেয়ে নিরুৎসব শান্ত জীবন ভাল লাগিতেছে না, তাই কি সে সহরের হৈ চৈ চায় ? বাণিজ্যলক্ষ্মীর রূপা কি তার চাই ? অথবা তার কামনা শুধু নূতনত্ব, পরিবত্তান ? এ রকম অনেক প্রশ্ন মনে জাগে, ভালম৩ একটা জবাবও সে খুজিয়া পায় না। মনের মধ্যে একটা গভীর অসন্তোষ শুধু অনেকদিন হইতে স্পষ্ট হইয়া আছে এবং কিভাবে যেন তার ধারণা জন্মিয়া গিয়াছে কলিকাতায় গিয়া বাস করিতে না পারাই তার এই অসন্তোষের কারণ । কেন তা কে জানে ! কি যেন সব ঘটা উচিত ছিল, কিন্তু ঘটিতে পারিতেছে না, অনির্দিষ্ট অনেক সম্ভাবনা যেন বাতিল হইয়া যাইতেছে, দূরে কি যেন তার প্রতীক্ষায় রহিয়াছে, কাছে আগাইয়া যাওয়া যাইতেছে না- এমনি এক অনাবশ্যক রহস্যময় অনুভূতি সর্বদা তাকে পীড়ন করে আর গ্রামের সঙ্কীর্ণ আবেষ্টনী হইতে মুক্তি পাওয়ার জন্য মন তার ছটফটা করিতে থাকে। সহরে গিয়া অর্থে পার্জনের কথা অবশ্য সে ভাবে কিন্তু সেটা দেশের সম্পত্তির আয় কম হওয়া ও খরচ বাড়ার মধ্যে সামঞ্জস্য করার হিসাব। সহরে গিয়া অর্থে পার্জন করা আসল উদ্দেশ্য নয় । সহরে গিয়া কোন উপায়ে যদি লাখপতি হইয়া যাইতে পারে তা হইলে অবশ্য তার আপত্তি কিছু নাই। কিন্তু সহরের আকর্ষণটা তার লাখপতি হওয়ার কামনার জন্য নয় । নানা আপত্তি তুলিয়া, রাগ করিয়া চোখের জল ফেলিয়া মা ছেলের প্রস্তাবটা বাতিল করার জন্য প্ৰাণপণ চেষ্টা আরম্ভ করিয়াছিলেন। একদিন মনোমোহনের প্ৰচণ্ড ধমকে তার চেষ্টা থামিয়া গেল । ছেলের কাছে এই তার প্রথম ধমক খাওয়া । স্নেহের নয়, অভিমানের নয়, আদরের নয়, রাগ ও বিরক্তির ধমক ৷ গরম মেজাজে বাড়ীর কর্তা যেভাবে ধমক দেয় । Rea