পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী আজ যেন মা আরেকবার ভাল করিয়া বুঝিতে পারিলেন তঁর ছেলের ব্যাপটি বঁচিয়া নাই । তারপর হইতে মা একেবারে চুপ করিয়া গেলেন। একটি কেবল অনুরোধ জানাইলেন ছেলেকে । ‘কর্তার বাৰ্ষিক কাজটা এখানে সেরে যা মনু।” এ অতি সঙ্গত অনুরোধ। যে মানুষটার সারাজীবন এখানে কাটিয়াছিল, দেশের লোকেও প্ৰত্যাশা করে যে তার বার্ষিক কাজটা দেশেই সম্পন্ন হইবে। আগে সহরে গিয়া বাসা বঁধিলেও এই কাজের জন্য সকলকে নিয়া তাকে অন্ততঃ কয়েকদিনের জন্য দেশে ফিরিতে হইবেই। মমোমোহন বলিল, “বেশ, তাই হবে ।” সহরে যাওয়া মাস তিনেক পিছাইয়া গেল । মোটে তিন মাস, ত্রিশ বছরের সঙ্গে আর শুধু তিনটি মাস যোগ দেওয়া । সময় বিশেষে তিন মাস সময়ও কত যে দীর্ঘ হইতে পারে! তবে হ্যা, বিদায় তাকে দিতে হইবেই জানিয়া গ্ৰাম যেন আয়োজন করিয়াছে তার মনোরঞ্জনের, এখান হইতে চলিয়া যাওয়ার পর এ গ্রামের স্মৃতি যাতে তার কাছে প্ৰীতিকর হয়। প্ৰতিদিন ভোরে কে যেন এখন পূবের আম কঁঠালের বন হইতে ধীরে ধীরে ঠেলিয়া তুলিয়া সূৰ্য্যকে আকাশে স্থাপন করে, পাখীদের গান ঝরায়, বিল ছাইয়া পদ্ম ফুল ফোটায়, ধানের ক্ষেতে ঢেউ তোলানো বাতাসে পাঠাইয়া দেয় মুখা ঘাসের মেটে গন্ধ আর গায়ের মানুষের কথায় ব্যবহারে আমদানী করে আন্তরিক প্রীতির অর্ঘ্য । বিদায় হওয়ার অধীরতার মধ্যেও মাঝে মাঝে গ্রাম ছাড়িয়া যাওয়ার কথা ভাবিয়া মনও বেশ খানিকটা কেমন কেমন করে বৈকি। নিজে দেখিয়া পছন্দমত একটি ভাল বাড়ী ঠিক করিবার জন্য মনোমোহন প্ৰথমে এক কয়েকদিনের জন্য কলিকাতায় আসিল। উঠিল সহরের এক নামকরা হোটেলে-বাহিরের চাকচিক্যের তুলনায় ভিতরের আভিজাত্য যার বেশী। কলিকাতায় পছন্দসই বাড়ী খুজিয়া বাহির করা যে কি হাঙ্গামার ব্যাপার RVe