পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী কিন্তু জীবনের গত কয়েকটি বছরের হিসাবে তারা পরস্পরের অপরিচিত। যতই বিবরণ তারা পরস্পরকে দিক, সেগুলি হইবে শুধু বড় বড় কয়েকটি ঘটনার পরিচয়, আতি সংক্ষিপ্ত পরিচয় । সংবাদপত্রের রিপোটের মত। অসংখ্য ক্ষণগুলির খুঁটিনাটি বিচিত্ৰ বিবরণ পরস্পরের অজানাই থাকিয়া যাইবে । পাঁচ বছর আগে মনোমোহনের বিবাহের সময় চিন্ময় তার গ্রামের বাড়ীতে গিয়াছিল, কয়েকদিন থাকিয়া আসিয়াছিল। সেই তাদের শেষ দেখা । তারপর কিছুকাল ধরিয়া মাঝে মাঝে একজন আর একজনকে চিঠি লিখিয়াছে। বছর দুই আগে চিন্ময়ের বিবাহের সময় সে বন্ধুকে মস্ত একটি চিঠি লিখিয়াছিল। সে চিঠির আগাগোড়া শুধু এই সমস্যার আলোচনা ছিল, সে কি সুখী হইবে ? মোহন তো জানে, চিরদিন সে গ্রামের প্রতি গভীর আকর্ষণ অনুভব করিয়াছে, অনাড়ম্বর সহজ শান্ত জীবন সে পছন্দ করে । সন্ধ্যার অবশ্য তুলনা নাই, তাপস অথবা হিরণায়কে বাতিল করিয়া সন্ধ্যা যে তার সঙ্গে জীবন কাটাইতে চাহিবে নিজের এই সৌভাগ্যে এখনও তার যেন বিশ্বাস হইতে চায় না। তবু মনটা মাঝে মাঝে খুত খুত করে। মনে হয়, সন্ধ্যা যদি সহর হইতে অনেক দূরে কোন পল্লীতে গৃহস্থের অন্তঃপুরে বড় হইত। আর বহুদিনের পরিচয়ের বদলে চিরন্তন প্রথামত একদিন দু’একজন বন্ধুর সঙ্গে গিয়া মেয়ে পছন্দ করিয়া আসিত এবং আরেকবার সমারোহে গিয়া সন্ধ্যাকে বিবাহ করিয়া আনিত, কি সুখীই সে হইত জীবনে । মোহন যেমন লাবণ্যকে নিয়া সুখী হইয়াছে । 信念 পডিয়া মোহন ভাবিয়ছিল : এ কোন দেশী নেকামি ? গ্ৰাম্য গৃহস্থের অন্তঃপুরে মানুষ হইলে সন্ধ্যা যে আর এই সন্ধ্যা থাকিত না, এটুকু বুঝিবার মত বুদ্ধি কি চিন্ময়ের নাই ? লাবণ্য ও চিঠিখানা পড়িয়াছিল, স্বামীর সব চিঠিই সে পড়ে। রাগ করিয়া সে বলিয়াছিল, “তার মানে আমাকে তোমার বন্ধু মুখুঢ়া গেয়ে ভূত মনে করে।” চিঠির মানে তাই দাড়ায়। তবে মোহন বন্ধুকে জানিত কি না, তাই সে সাস্তুনা দিয়া বলিয়াছিল : ‘না, ঠিক তা নয়। ওর কাছে গ্রামের মেয়ে হল কতকটা সেকালের ঋষিদের আশ্ৰমপালিত কন্যার মত। রূপ গুণ বিদ্যাবুদ্ধি RV8