পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহরবাসের ইতিকথা ‘একবারটি আমায় দেখিয়ে কিনলে পারতে। সত্যি বড় ব্যস্তবাগীশ মানুষ , তুমি ? লাবণ্যের রূপে এমন একটা কোমলতা আছে যে দেখিলে চোখ জুড়াইয়া যায়। দুঃখের বিষয়, তার বড় জমকালো রঙীন শাড়ী পরার সখ্য, ঘষিয়া মাজিয়া ক্রীমপাউডার দিয়া রূপকে তীক্ষা করার দুরন্ত সাধ। প্রক্রিয়াটা মোহন পছন্দ করে কিন্তু ফলটা তাকে দমাইয়া দেয়। সন্ধা কিভাবে প্ৰসাধন কবিত। সে জানে না, মনে হইত উজ্জল হইয়াও মুখখান যেন তার কোমল হইয়াছে। অথচ প্রসাধনের পরে লবণ্যের মুখখানা শুধু চকচকে হয়, শ্ৰী থাকে না। হয়তো লাবণ্যের মুখ সন্ধ্যার মুখ নয় বলিয়া । অথবা হয় তো নিজের রূপকে ঘষামাজ করার কলা কৌশল লাবণ্য জানে না। তবু রূপ যে ভারে কাটে না লাবণ্যের ধারে কাটে, এটা জানা থাকায় মোহন মুখ মাজাঘষার চেষ্টায় স্ত্রীকে প্রশ্ৰয় দেয়, উৎসাহও দেয়। সহরে যাইতে লাবণ্যেরও খুব আগ্রহ এবং উৎসাহ । ধরিতে গেলে তার পরাধীন বধূজীবনের অন্ত হইয়াছে, মোহন কৰ্ত্তী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেও সংসারের কত্রী হইয়াছে, রাজ্যাভিষেকের সঙ্গে সঙ্গে রাজার ছেলের বৌ যেমন রাণী হয়। কিন্তু এতদিন ধরিয়া শাশুড়ী ননদ গুৰুজনদের কাছে ভীরু লাজুক বৌ সাজিয়া থাকা এমন অভ্যাস হইয়া গিয়াছে যে মোহনের হুকুমেও সে নিজেকে বদলাইতে পারিতেছে না, বিশেষ কোন সুযোগ সুবিধা কাজে লাগাইতে পারিতেছে না নিজের নূতন পদমৰ্য্যাদার। নূতন জায়গায় নূতন বাড়ীতে গেলে হয়তে কাজটা সহজ হইতে পারে। ক্রমাগত যে দায়িত্বের কথা বলিয়া মোহন তার মাথা ঘুরাইয়া দিতেছে, সে দায়িত্ব হয়তো সেখানে পালন করা কঠিন হইবে না । আরও একটা কারণ আছে তার উৎসাহের । সে কারণটাও তার কাছে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। যাওয়ার চার পাচদিন আগে সে মোহনকে খুশীর সঙ্গে বলে, “এক হিসেবে ভালই হবে, একটু ভালরকম চিকিৎসা হবে আমার। এ ব্যথা সত্যি আর সইতে १ांद्धि का।' মোহন সায় দিয়া বলে, ‘হঁ্যা, আমিও সে কথা ভেবে রেখেছি, একজন ভাল ডাক্তার দেখাব তোমাকে ৷” Հեծ