পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহরবাসের ইতিকথা “আপনি কলকাতা যেতে চান ? 'হঁ্যা বাবা, নিয়ে চল আমাকে ৷” পীতাম্বরের মুখের অসহায় দীন ভাবে এখন আর একটুও অভিনয়ের ছাপ থাকে না, ব্যাকুলতার মধ্যে তার সরলতা স্পষ্ট হইয় উঠে। সে বলে, “শোন বলি তোমাকে, তিন দিন হাতে একটি পয়সা নেই, ঘরে এক মুঠো চাল নেই।” ‘কলকাতা গিয়ে করবেন কি ?” “পয়সা কামাব। একটা দু’টো মাস একটু মাথা গুজে থাকতে দি ও, একটা উপায় করে নেব । সহরের পথে পয়সা ছড়ানো থাকে। কাজকম্মে না পাই, ভিক্ষে করব। গায়ে আমার ভিক্ষে করার পর্য্যন্ত উপায় নেই।” উদ্দেশ্য দু’জনেরি ভাল। অবস্থার উন্নতি করিতে চায়। মোহন রাজী হইয়া গেল। এর সঙ্গে গেলে বিশেষ ক্ষতি ও নাই, অসুবিধাও নাই। এরা আত্মীয় Ge s । বাড়ীর পিছন দিকে ঠাকুর চাকরের ঘরের পাশে একটা ছোট বাড়তি ঘর আছে, দু’জনে সেখানে থাকিতে পরিবে। উপার্জনের ব্যবস্থা যদি করিতে না পারে, দু’তিন মাস দেখিয়া গ্রামে বিদায় করিয়া দিলেই চলিবে। রওনা হওয়ার আগের দিন অনেক রাত্রে গ্রামের লোকের চোখ এড়াইয়া পীতাম্বর আবার আসিল । “একসাথে যাওয়া হল না। বাবা। আমার আদেষ্টটাই মন্দ। পাচুর জ্বর এসেছে। পশু যাব।” 'পশু যদি জর না কমে ?” “কমবে,-কালকেই ছেড়ে যাবে। গাড়ীর ভাড়াটা বরং দিয়ে দাও আমাকে আজ, পশু টিকিট কেটে রওনা হয়ে যাব।” ব্যাপারটা বুঝিতে পারিয়া মোহন এবার মনে মনে হাসিল। গ্রামের লোকের চোখের সামনে মোহনের সঙ্গে সে ট্রেনে উঠিতে চায় না, সকলে টের পাইয়া যাইবে মোহন তাকে দয়া করিয়া নিয়া যাইতেছে। মোহনের কাছে মাসে পাচটা করিয়া টাকা নেওয়া চলে, সে টাকা পূর্বপুরুষের অপরাধের প্ৰায়শ্চিত্ত হিসাবে মোহনের দেয়, দেখা হইলে দশজনের সামনে তার সঙ্গে ভদ্রতা রাখিয়া কথাও বলা চলে, কিন্তু প্ৰকাশ্যভাবে দয়া তো গ্ৰহণ করা চলে না, ভােব তো করা চলে না। তার সঙ্গে—এত গালাগালি ও অভিশাপ দিবার পর ! Rtv