পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী করিবে কোথায় যাওয়া যায়। পীতাম্বরও বাহির হইয়া ফুটপাত ধরিয়া গুটি গুটি হঁাটিয়া চলিতেছিল। দেখিয়া মোহনের বড় মায়া হইল । তার নতুন গাড়ীতে চাপার সাধটা হয়তো বেচারা মুখ ফুটিয়া প্ৰকাশ করিতে লজ্জা পায়, হয়তো সে কি মনে করিবে ভাবিয়া সাহস পায় না। নিজে যাচিয়া ওর সাধটা তার মেটানো উচিত। গাড়ী থামে, ডাক শুনিয়া পীতাম্বর কাছে আসে। মোহন 1ਗੈਰ উদারতার সঙ্গে বলে, “কোথায় যাচ্ছেন ? চলুন আপনাকে পৌছে দিয়ে আসি।” পীতাম্বর মাথা নাডিয়া বলে, “মোটর চাপতে পারি না। বাবা, কেমন গা গুলিয়ে \etले ।' তাকে পিছনে ফেলিয়া গাড়ী আগাইয়া যায়, মোহনের মৃদু বিরক্তি ধীরে ধীরে ভোতা ক্ৰোধে পরিণত হইতে থাকে। পীতাম্বরের অজুহাত সে বিশ্বাস করে না । যে গাড়ীতে চোখ বুজিয়া থাকিলে সব সময় বুঝা যায় না। গাড়ীটা চলিতেছে কি দাড়াইয়া আছে, তার সেই গাড়ীতে চাপিলে ব্যাটার গা গুলাইবে । এ শুধু পীতাম্বরের অহঙ্কার। অনুগ্রহ নিতে তার অপমান বোধ হয়। পীতাম্বরের অনেক চালচলনের মানে এখন যেন মোহনের কাছে পরিষ্কার হইয়া যায় । তার বাড়ীতে যে থাকিতে হইয়াছে এই লজ্জাতেই পীতাম্বর কাতর, প্ৰাণপণে সে নিজের সম্মান বঁাচাইয়া চলিবার চেষ্টা করে। গ্যারেজের ঘরটা বাছিয়া নেওয়ার কারণও তাই । গলাবাজিতে গ্রামকে সে মুখর করিয়া রাখিত, এখানে আসিয়া একেবারে চুপ হইয়া গিয়াছে। কারো সঙ্গে মেলামেশা করে না, সর্বদা দূরে দূরে থাকে, সহানুভূতি চায় না, পরামর্শ চায় না, সুবিধা চায় না । সাত গণ্ডী পয়সা সম্বল করিয়া সে বাড়ীর বাহির হইয়াছিল, এ পৰ্য্যন্ত মোহনের কাছে একটি পয়সাও সাহায্য চায় নাই। সাত আনা কি খরচ হইয়া যায় নাই তার ? গ্রামের লোকের চোখ এড়াইয়া অনেক রাতে গাড়ীভাড়া ভিক্ষা চাহিতে আসার সঙ্গে এ সমস্তের একটা যেন মিল আছে । এক সন্ন্যাসীর কথা মোহনের মনে পডে। ভিক্ষা করিতে দুয়ারে আসিয়া সে চুপ করিয়া দাড়াইয়া থাকিিত, বাড়ীর মানুষ তাকে দেখিতে পায় নাই জানিয়াও একটি শব্দ করিত না, কিছুক্ষণ নীরবে অপেক্ষা করিয়া অন্য বাড়ীর দুয়ারে চলিয়া যাইত। কি চাও ?-জিজ্ঞাসা করিলে সে সাড়া দিত না, যেন শুনিতেই পায় 8 CSb”